বাবা–মা–বোনকে হাতের শিরা এবং নলি কেটে খুন করেছিল যুবক। তিন বছর আগে এই শিহরণ জাগানো ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। তিন বছর পর ওই দোষী সাব্যস্ত যুবক প্রমথেশ ঘোষালকে আজ, সোমবার ফাঁসির সাজা শোনাল চুঁচুড়া আদালত। এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মার কাছে মুক্তির কাতর আর্জি জানায় অভিযুক্ত যুবক। আজ সোমবার চুঁচুড়া আদালতের বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মা এই রায় দিয়েছেন। গত ২৮ নভেম্বর চুঁচুড়া আদালতে সাতজনের ফাঁসির সাজা হয়। ২০২০ সালে বিষ্ণু মাল হত্যা মামলায় সেই সাজা শোনানো হয়েছিল। আজ দশঘড়ার ঘটনায় ফাঁসির সাজা হয়েছে একজনের।
এদিকে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর ধনেখালি থানার দশঘড়া গ্রামের পাল পাড়ার বাসিন্দা প্রমথেশ ঘোষালের বাবা অসীম (৬৮), মা শুভ্রা (৬০) এবং বোন পল্লবীকে (৩৮) গলার নলি এবং হাতের শিরা কেটে খুন করা হয়। তারপর হাতের শিরা কেটে প্রমথেশও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। আর তারপর এই চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসায় প্রাণে বেঁচে যায় প্রমথেশ। তখনই পল্লবীর স্বামী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ধনেখালি থানায় প্রমথেশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে হাসপাতাল থেকেই প্রমথেশকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় বিচার।
আরও পড়ুন: সিপিএমের অন্দরে একাংশের বিজেপি দুর্বলতা, জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে উদ্বেগ
অন্যদিকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেও প্রমথেশ স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু আজ পেশায় গৃহশিক্ষক প্রমথেশ সাজা ঘোষণার পর এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারকের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং মুক্তির আবেদন করে। কিন্তু বিচারক সেই আবেদন নাকচ করে দেন। প্রমথেশ নিজেও হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি আইনজীবী শংকর গঙ্গ্যোপাধ্যায় জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪ জন সাক্ষী দিয়েছেন। এই মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত জেলেই ছিল। খুনের নৃশংসতা বিচার করে বিচারক মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তখন কান্নায় ভেঙে পড়লেও বিচারক কোনও কথায় কান দেননি।
এছাড়া হুগলির পুলিশ সুপার (গ্রামীন) কামনাশিস সেন জানান, আদালত ও বিচার ব্যবস্থার উপর সবাইকে আস্থা রাখতে হবে। কারণ এখানেই একমাত্র সঠিক বিচার মেলে। তাই অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, শাস্তি পেতে হবেই। প্রমথেশ পেশায় গৃহশিক্ষক ছিল। সাজা ঘোষণার হওয়ার পর এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারকের কাছে মুক্তির আবেদন করলেও কোনও লাভ হল না। এখন অনুতপ্ত হয়েও বিচার পাল্টাবে না বুঝতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। কিন্তু বিচারক তাঁর আবেদন নাকচ করে দেন। ফাঁসির সাজা ঘোষণা হতেই আদালত চত্বরে চাঞ্চল্য ছড়ায়।