আশঙ্কা যেমনটা করা হয়েছিল, তেমনই ঘটনা ঘটল। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি কৃষি ও সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন চলাকালীন অশান্তি আর ঠেকানো গেল না। সবথেকে বড় কথা হল, এই নির্বাচন ঘিরে মূলত তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সংঘাত হলেও, তার জের পোহাতে হল সাধারণ ভোটারদের।
অভিযোগ, ভোট দিতে যাওয়ার পথে ভোটারদের নিয়েই নাকি টানাটানি শুরু করে দেন তৃণমূল ও বিজেপির সদস্যরা! ভোটারদের স্লিপ কেড়ে নেওয়া হয় বলেও দাবি করা হয়। এমনকী, পুলিশের সামনেই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বলেও একাধিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও পুলিশ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় মাঠে নামে।
বিজেপির দাবি, সংঘর্ষের ফলে তাদের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, সংঘর্ষের মাঝে পড়ে কয়েকজন ভোটারও জখম হন বলে স্থানীয় কিছু সূত্রের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কাঁথি কৃষি ও সমবায় ব্যাঙ্কের সভাপতি পদে রয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। একটানা ২৩ বছর ধরে এই পদে রয়েছেন তিনি।
তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে যে ২৪টি সমবায় ব্যাঙ্ক রয়েছে, তার মধ্যে কাঁথির এই ব্যাঙ্কটিই প্রথম। প্রতি বছর এই ব্যাঙ্কে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়। সমবায় নির্বাচনে মোট আসন রয়েছে ৭৮টি। যার মধ্য়ে ১৪টি আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলিতে ভোট হচ্ছে।
শনিবার (২৯ মার্চ, ২০২৫) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ পর্ব দুপুর ২টো পর্যন্ত চলার কথা। তারপর নিয়ম মতো ৩০ মিনিটের একটি বিরতি দেওয়া হবে। এবং তারপরই শুরু হবে গণনার কাজ। কিন্তু, সেসব হওয়ার আগেই তৃণমূল বিজেপির সংঘাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মোট ১৩টি ভোটগ্রহণকেন্দ্রের মধ্যে জাতীয় বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণকেন্দ্রের কাছেই অশান্তি ছড়ায়।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজেপি নেতারা এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকেই দায়ী করেন। কাঁথি পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর তাপস দোলাই যেমন বলেন, 'ভোটারদের থেকে ভোটার কার্ড এবং স্লিপ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। তা সত্ত্বেও কিছুই বলছে না। মারধর করা হচ্ছে। আমি কাউন্সিলর, তাও মারছে। ঠেলাঠেলি করছে। একটা সমবায় নির্বাচনে এসব করছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কে জানে!'
বিজেপি নেতা দিব্য়েন্দু অধিকারী বলেন, 'এখানে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশের নেতৃত্বে এসব চলছে। সাধারণ ভোটারকে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। অস্থির অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।'
উলটো দিকে তৃণমূল কংগ্রেস এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি বলেন, 'চোরের মায়ের বড় গলা! মানুষ নেই, জনবল নেই, ভোটার নেই। এখন পিঠ বাঁচাতে হবে। তাই শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালারা এসব করছেন। হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছে। তাই একটাই কাজ, হাওয়া গরম করুন।'
তৃণমূল নেতা অখিল গিরি বলেন, 'কাঁথি জাতীয় বিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট চলছিল। যেহেতু বিজেপি তেমন কিছু ভোট পায়নি, তাদের সমর্থকরা আসেনি। বিজেপি সমর্থকরা তৃণমূলকে চোর বলে, তাতেই উত্তেজনা ছড়ায়। অশান্তি পাকানোর চেষ্টা চলছে।'
উল্লেখ্য, এই নির্বাচন যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে করানো হয়, সেই দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করা হয়েছিল। কিন্তু, আদালত সেই দাবি খারিজ করে দেয়।