কী আর এমন বয়স একরত্তির। এই সবে এগারো বছরে পড়েছে। আর সেই বয়সেই চিতাবাঘের সঙ্গে লড়ে গেল ওই নাবালক। রীতিমতো চিতাবাঘকে পিটিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাল ওই বালক। ডুরার্সের ক্রান্তির ঘটনা। ওই বালকের সাহসিকতার কাহিনি এখন স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে। বালকের সারা শরীরে আঁচড়ে দিয়েছে চিতাবাঘটি। রক্তাক্ত অবস্থাতেও হাল ছাড়েনি সে। ঠিক কী হয়েছে ঘটনাটি?
সূত্রের খবর, ওই নাবালক চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। নাম রেহান ওরাওঁ। বাড়ি ডুয়ার্সের ক্রান্তির মাঝগ্রাম এলাকায়। শনিবার স্থানীয় বালিধুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রটি চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় গিয়েছিল। মূলত চা বাগানের শুকনো ডাল সংগ্রহের জন্য সে বাগান সংলগ্ন এলাকায় ঘুরছিল। আসলে সেই ডাল দিয়েই তাদের বাড়িতে জ্বালানির কাজ করা হয়। এদিকে সেই চা বাগান সংলগ্ন ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ছিল সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। আচমকাই ঝোপের মধ্যে থেকে চিতাবাঘটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই কিশোরের উপর। এদিকে প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায় কিশোর। কিন্তু ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার ছেলে নয় রেহান। হাতে তখনও ধরা ছিল চা বাগানের শক্ত ডাল। এরপর চিতাবাঘের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় রেহান।
হাতে পায়ে আঁচড়ে দিয়েছে চিতাবাঘ। তবু হাতের ডাল ছাড়েনি সে। ক্রমাগত সেই ডাল দিয়ে সে পেটাতে থাকে চিতাবাঘকে। একরত্তির এই সাহসের কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা। একটা সময় পিঠটান দেয় চিতাবাঘটি। কোনওরকমে রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটতে ছুটতে রেহান ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে। প্রথমে তাকে উত্তর সারিপাঝুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ওদলাবাড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
রেহানের নিজের জীবনটাও বেশ কষ্টের। বাবা বাবুরাম ওরাওঁ কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন। এরপর বাবুরামের স্ত্রী কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছেন। এখনও খোঁজ মেলেনি তাঁর। তবে আপাতত কাকার সংসারেই থাকে রেহান। বাবা মায়ের স্নেহচ্ছায়াও নেই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে খুব কাছ থেকে সে দেখেছে লড়াইয়ের ময়দানকে। আর সেই ময়দানে যে তাকে একাই লড়তে হবে একথাও জানে রেহান। শনিবার সামনে চিতাবাঘ দেখতে পেয়েও লড়ে গিয়েছে ছোট্ট রেহান। শুধু লড়েনি, চিতাবাঘকে পিটিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে, প্রাণ হাতে করে ফিরেও এসেছে সে। অনেকেই বলছেন এই ঘটনায় মনে পড়ে যাচ্ছে দেশবরেণ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঘা যতীনের কথা। তবে রেহানের সাহসিকতা এখন ডুয়ার্সে চর্চার বিষয়।