ইয়াসের পর থেকে একনাগাড়ে বৃষ্টির ধস নামল পাহাড়ে। একটানা বৃষ্টির জেরে ভয়ানক চেহারা নিয়েছে উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ নদী। অতি ভারী বৃষ্টির জেরে দুর্যোগ নেমেছে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে।বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নমবল্লম। ধস নামার ফলে বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়ি ঘরদোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। একইসঙ্গে ভেঙে পড়েছে অনেকগুলো গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রশাসন, পুলিশ, গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ও বনদফতরের আধিকারিকরা একযোগে কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানোর জন্য জোর কদমে কাজ শুরু করেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মী ও আধিকারিকরা। এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ৪৫ টি বাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
অন্য দিকে, মহানন্দা, বালাসনের মতো নদীগুলির গর্জনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ধস নেমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ডুয়ার্সে পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের তোড়ে রেললাইন ভেসে গিয়েছে। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে হুড়মুড়িয়ে সেতু ভেঙে পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। পরিস্থিতি ভাল নয় শিলিগুড়িরও। টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড জলবন্দি হয়ে পড়েছে। শহরের মধ্যে একাধিক সেতুর শোচনীয় অবস্থা হয়েছে। বন্ধ করতে হয়েছে যান চলাচল। শিলিগুড়ি পুরনিগমের কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। চলছে ত্রাণ বিতরণের কাজও।
পাহাড় জুড়ে প্রবল বৃষ্টিতে হওয়া ধসের জেরে শিলিগুড়ি থেকে মিরিক যাওয়ার রাজ্য সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ তারপরেই যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুধিয়া থেকে পানিঘাটা যাওয়ার পথে, পাঙ্খাবাড়ি রোডে, মানেভঞ্জন-রিম্বিকের পথেও ছোটবড় ধস নেমেছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। পূর্ত দপ্তরের কর্মীরা ধস সরাতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। কিছু রাস্তায় আবার পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ে রাস্তা আটকে দিয়েছে।
সেবকের কাছে বাগরাকোট ও ওদলাবাড়ির মাঝামাঝি এলাকায় জোরান্তি খোলা সেতু ভেঙে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ডুয়ার্স। সেতুর সঙ্গে ২০ ফুট নীচে পড়ে যায় কয়লাবোঝাই একটি ট্রাকও। ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক ও খালাসির মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডুয়ার্সের মাল ব্লকের লিশ নদীর রেল ব্রিজের অক্সাইডের গার্ডওয়াল কিছুটা ধসে যাওয়ায় রেল লাইন বিপজ্জনক হয়ে আছে।জাতীয় সড়কে সেতু ভেঙে পড়ার কারণে শিলিগুড়ির সঙ্গে মালবাজার, মেটেলি, নাগরাকাটা ও বানারহাটের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বৃষ্টির জেরে শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া দাগাপুরের পঞ্চনই নদীর সেতুর নীচ থেকেই মাটি ধসে গিয়েছে। ফলে সেতুর একাংশ ঝুলে আছে। আবার পাতিকলোনি এলাকার অস্থায়ী লোহার সেতুর রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানেও যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। জলবন্দি হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের মানুষ।