রেললাইনের ধারে তখন কেউ ছোট্ট চায়ের গুমটিতে বসে। কেউ আবার লাইনের ধারে ত্রিপলের ছাউনিতেই ঘরকন্নার কাজ সারছিলেন। এই দৃশ্যই দেখতে দেখতে আসছিলেন এক সেনা জওয়ান। সফর করছিলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। আচমকাই একটা বিকট আওয়াজ। সঙ্গে প্রবল ঝাঁকুনি অনুভব করলেন ভেঙ্কটেশ। তার পরই দেখলেন তাঁর সহযাত্রীরা একে অপরের ঘাড়ের উপর ছিটকে পড়ল। আর কামরার ভিতরের আলোও নিভে গেল। পেশার তাগিদে অনেক চড়াই–উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় জওয়ান দের। তাই বুঝতে অসুবিধা হল না ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তারপর কলকাতায় নিজের সিনিয়র অফিসারকে ফোন করে জানান, যে ট্রেনে তিনি যাচ্ছেন সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
চোখের সামনে তাসের ঘরের মতো উল্টেপাল্টে গিয়েছে একের পর এক ট্রেনের বগি। মাত্র এক লহমা। সম্বিত ফিরতেই আর দেরি করেননি ভেঙ্কটেশ এন কে। এটাই তাঁর পুরো নাম। তিনি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) জওয়ান। তাঁর কলকাতায় পোস্টিং। জওয়ান ভেঙ্কটেশের বাড়ি তামিলনাড়ুতে। ছুটি নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। ভেঙ্কটেশ ছিলেন থার্ড এসি কোচে। সেখান থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে ‘লাইভ লোকেশন’ পাঠান তিনি। যাতে দ্রুত উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেন। এটাই ছিল খবরের প্রথম সূত্রপাত। তারপর তা দ্রুত চড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
এদিকে ভুবনেশ্বর থেকে সরকারি সূত্রে খবর, উদ্ধারকাজের জন্য ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০টি বাস এবং ৪৫টি মোবাইল স্বাস্থ্য ইউনিট দুর্ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এছাড়াও প্রায় ১২০০ উদ্ধারকর্মী সেখানে রয়েছেন। একইসঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরনের গাড়িই ব্যবহার করা হয়। এমনকী ট্রাক্টরে করেও মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন পরিস্থিতি বিচার করে ওই জওয়ান ভেঙ্কটেশ আটকে পড়া সহযাত্রীদের উদ্ধারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একে একে যতজনকে পারলেন উদ্ধার করে তিনি রেললাইনের ধারে একটি দোকানে নিয়ে এলেন। এরপর সেখানে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারপর উদ্ধারকারী দল।
ঠিক কী বলছেন ওই জওয়ান? শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বালেশ্বেরের বাহানগা স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ২১টি বগি লাইনচ্যুত হয়। তারপর শুধুই মৃত্যুমিছিল। এই গোটা ঘটনা নিয়ে জওয়ান ভেঙ্কটেশ এন কে সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘কামরা থেকে সহযাত্রীদের দ্রুত উদ্ধারের কথা মাথায় আসতেই কাজ শুরু করি। কামরার ভিতরে তখন অন্ধকার। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে সহযাত্রীদের বের করার চেষ্টা করছিলাম। ততক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দারাও চলে এসেছিলেন উদ্ধারকাজে হাত লাগাতে। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে যাত্রীদের বের করে আনছিলাম। এই কঠিন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলেন। ওঁরাই আসল ত্রাতা।’