সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ত্রুটি, নাকি চালকের গাফিলতি? ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজারে ঘটা ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দায় কার? ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এই প্রশ্নের সঠিক জবাব কারও কাছে নেই। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত রেলের দাবি, মৃতের সংখ্যা এখন ২৮৮। সেটা আরও বাড়তে পারে। এই আবহে সিবিআই বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে রেল দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের আর্জি জানালেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে এই নিয়ে চিঠি লিখলেন তমলুকের সাংসদ। শুধু তাই নয়, এই প্রথম কোনও সাংসদ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন।
এদিকে বালেশ্বর জেলার পুলিশ সুপার সাগরিকা নাথের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছুঁতে পারে। তবে তার মধ্যেই সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—দুর্ঘটনার সময় চেন্নাইগামী আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সামনে সিগন্যাল ছিল মেইন লাইনের। কিন্তু পয়েন্ট লুপলাইনেই রয়ে যায়। তার জেরেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রেলের প্রাথমিক তদন্তে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও সরকারিভাবে এই খবরে সিলমোহর দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী নিজের চিঠিতে লেখেন, বন্দে ভারতের সাফল্য নিয়ে প্রতিবেশী দেশ তো বটেই, খুশি নন কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা আগের রাজনৈতিক দলও। তাই এই ঘটনার তদন্ত সিবিআই–এর মতো কোনও সংস্থাকে দিয়ে করা উচিত।
অন্যদিকে প্রাথমিক তদন্তে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সিগন্যালে ত্রুটির জেরেই এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে আরও তদন্ত করার পরেই বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সূত্রের খবর, বাহানাগা স্টেশনের ঢোকার মুখে আপ এবং ডাউনের পাশাপাশি দু’টি অতিরিক্ত লাইন রয়েছে। এই জোড়া লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল দু’টি মালগাড়ি। এমন জায়গায় পয়েন্টের মাধ্যমে ট্রেন ট্র্যাক বদল করে। করমণ্ডলের চালক গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে দ্রুতগতিতে ট্রেন ছোটান। কিন্তু ট্র্যাক বদলের সংযোগস্থলের পয়েন্ট থেকে যায় লুপ লাইনে। তাই দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে করমণ্ডল। ২১টি বগি নিমেষে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপর। তখন ডাউন মেইন লাইন দিয়ে দ্রুতগতিতে হাওড়ার দিকে আসছিল যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের লাইনচ্যুত বগির সঙ্গে ধাক্কা খায় তার দু’টি বগি। সেগুলিও বেলাইন হয়ে পড়ে।
আর কী জানা যাচ্ছে? করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর একটি যৌথ রিপোর্ট তৈরি হয়। সেটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর তৈরি হয়। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে প্রবেশ করেনি। ট্রেন লুপ লাইনে প্রবেশ করে। সেখানে আগেই একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়েছিল। তখন তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। গোটা বিষয়টির রহস্য উদঘাটন করতে দক্ষিণ–পূর্ব রেলের কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটিও তদন্ত করবেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। নিয়ম অনুযায়ী, পয়েন্টের আগে গতিবেগ কমাতে হয়। কিন্তু দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির গতি ১০০ কিমিরও বেশি ছিল। কেন চালক তা কমাননি? তাহলে লুপ লাইনে ঢুকে পড়েও এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে অনেকে মনে করছেন।