করোনা যোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এবার তার ভয়ঙ্কর নিদর্শন দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুরে। করোনার প্রথমসারির যোদ্ধাদের সুরক্ষা নিয়ে বারবার সরব হয়েছে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় করোনা যোদ্ধাদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। এবার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বড়মা কোভিড হাসপাতাল। পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম— তিন জেলারই আক্রান্তদের ভরসা ছিল বড়মা। সেই হাসপাতালেই রোগী ভর্তিকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর চালাল একদল ব্যক্তি। এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পাঁশকুড়ার দিক থেকে দুটি গাড়ি এসে বড়মা হাসপাতালের মূল ফটক খুলে ভেতরে ঢুকে যায়। দিনরাত ধরে কোভিড আক্রান্তদের এখানে নিয়ে আসা হয়, তাই হাসপাতালের মূল দরজায় তালা দেওয়া থাকে না। ওই দুটি গাড়িতে তিনজন মহিলা–সহ ১২ জন ছিল বলে খবর। তাদের মধ্যে এক মহিলার তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাকে দ্রুত অক্সিজেন দিতে হবে। কিন্তু এটা কোভিড হাসপাতাল। এখানে সাধারণ চিকিৎসা হয় না।
এই কথাই হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদেরকে জানিয়েছিলেন। এখানে কোভিড আক্রান্ত ছাড়া কাউকে ভর্তি নেওয়ার নিয়ম নেই। এই কথা শুনে ওই ব্যক্তিরা নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের হুইল চেয়ারে রোগীকে বসিয়ে তারা নিজেরাই হাসপাতালের দোতালায় আইসিইউ–তে চলে যায়। অভিযোগ, আইসিইউ-তে ঢোকার সময় নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিলে সেখানে অভিযুক্তরা ভেতরে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মারধর করে। আইসিইউ’র জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। তাঁরা সবাই মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলে অভিযোগ।
ভাঙচুর শুরু হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁশকুড়া থানায় খবর দেন। কলকাতা থেকে ১০–১২ জনের একটি দল পাঁশকুড়ার একটি হোটেলে পার্টিতে যোগ দেন। সেই পার্টিতেই রাতে একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে তাঁর সঙ্গীরা তখন বড়মা কোভিড হাসপাতালে যান। যে মহিলার শ্বাসকষ্ট হয়েছিল বলে দাবি, তাঁকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য একটি গাড়িতে যেতে দেয় পুলিশ। তবে চারজন হামলাকারীকে আটক করে নিয়ে আসা হয় পাঁশকুড়া থানায়। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা হল কলকাতার যাদবপুরের মৃত্যুঞ্জয় কর্মকার। লেক গার্ডেনসের রঞ্জিত কুমার পাসোয়ান। নিমতার সৌম্য চক্রবর্তী এবং পাঁশকুড়ার বাসিন্দা প্রত্যয় বর্ধণ।
এই ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘এটা অনভিপ্রেত ঘটনা। পুলিশকে হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বলেছি।’ ঘটনাস্থলে যান পাঁশকুড়ার বিডিও, পুলিশ ও কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক টিম পরিদর্শন করেন।