ঘরে ফিরতে না পেরে রাজ্যের নানান প্রান্তে আটকে পড়ছেন ভিনরাজ্যবাসী। তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার ও স্থানীয় মানুষ।
উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরে বাণী মন্দির রেলওয়ে স্কুলের মাঠে ঘাঁটি গেড়েছেন উত্তর প্রদেশের দেওরিয়া থেকে আগত একদল বানজারা বা যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষ। ২৩ সদস্যের দলে রয়েছেন অন্তঃস্বত্ত্বা এবং বেশ কয়েক জন বৃদ্ধ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে গত ২৪ মার্চ যখন দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সেই সময় তাঁরা নেপাল সীমান্তের কাছাকাছি পানিট্যাঙ্কি এলাকায় ছিলেন। তড়িঘড়ি সেখান থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন ধরতে এলেও হতাশ হতে হয়। ততক্ষণে লকডাউনের জেরে বাতিল হয়ে গিয়েছে সমস্ত ট্রেন। উপায় না দেখে শেষে শিলিগুড়ি জংশন থেকে ৫০০ মিটার দূরে স্কুলের মাঠেই তাঁবু গেড়েছেন যাযাবররা।
দলের তরুণ সদস্য বিশাল কুমার জানালেন, ‘আমাদের ঘুরে বেড়াতে দেখে পুলিশ ধরে। তারা আমাদের ঘোরাঘুরি করতে বারণ করে।’
দলের প্রবীণ সদস্য হুনু প্রসাদ বলেন, ‘কোনও রকমে আমরা সকুলমাঠে এসে পৌঁছোই। তখন থেকে এখানেই থেকে গিয়েছি।’
জানা গিয়েছে, স্কুলমাঠের শৌচাগার ব্যবহার করছেন যাযাবররা। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের চাল ও সবজি দিয়েছেন।
শিলিগুড়ির এসডিও সুমন্ত সহায় জানিয়েছেন, ‘এই মানুষগুলিকে কিছু এনজিও সাহায্য করছে। সাহায্য করতে প্রস্তুত সরকারও। তবে যাইহোক, ওঁদের উত্তর প্রদেশের গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।’
একই ভাবে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় আটকে পড়েছেন বিহারের ভাগলপুরবাসী ১৭০ জন শ্রমিক। কাটওয়া থানার ওসি বিকাশ দত্ত জানিয়েছেন, ‘রাজ্য সরকারের নির্দেশে রাজ্য রেল পুলিশ তাঁদের ট্রাকে চাপিয়ে বিহারে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ঝাড়খণ্ড সীমান্তে তাঁদের বাধা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
সেই থেকে কাটোয়া স্টেশনের বাইরে থাকতে হচ্ছে ভিনরাজ্যের এই শ্রমিকদের। তাঁদের খাদ্য জোগাচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।
তবে হাওড়া, শিয়ালদহ-সহ কোনও রেলস্টেশনেই ভিনরাজ্যের বাসিন্দারা আটকে নেই বলে জানিয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেল। রেলের মুখপাত্র নিখিল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাওড়া স্টেশন চত্বরে ১৫০ জন যাত্রী আটকে ছিলেন। তাঁদের বাসে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করেছে রাজ্য প্রশাসন। তাঁরা বেশিরভাগই গৌহাটি অভিমুখী যাত্রী ছিলেন। এখানে থাকা পর্যন্ত তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করে আরপিএফ।’
দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখপাত্র সঞ্জয়ল ঘোষও জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের কোনও রেল স্টেশনে যাত্রী আটকে পড়ে নেই।’
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দও জানিয়েছেন, ‘রেল স্টেশনে কোনও যাত্রী আটকে নেই কারণ রাজ্য পরিবহণ দফতর তাঁদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে।’