করোনা পজিটিভ - কথাটা শোনার পর প্রথমে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। তাও পরিবারের ১০ সদস্য সেই ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। পরে অবশ্য সেই মানসিক ধাক্কা সামলে নেন। আর এখন করোনা মুক্তির পর সেই প্রৌঢ় আত্মবিশ্বাসী - হ্যাঁ, করোনাকে হারানো সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সংকল্প, ইচ্ছা শক্তি, নিয়মানুবর্তিতার।
আরও পড়ুন : করোনা রুখতে বাড়িতেই মাস্ক তৈরি করুন, শিখে নিন ধাপে ধাপে পদ্ধতি
প্রথমে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা কালিম্পঙের একটি ব্যবসায়ী পরিবারের প্রধান ধরমনাথ সিংয়ের। কয়েকদিন আগেই করোনায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর বৌদির। তাঁদের পরিবারের সদস্যই উত্তরবঙ্গে প্রথম করোনার শিকার হন। ৫৯ বছরের ধরমনাথের আবার উচ্চ ব্লাড সুগার রয়েছে। ২০০৬ সালে কিডনি ট্রান্সপ্যান্ট হয় তাঁর।
আরও পড়ুন : করোনায় ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক বৃদ্ধি ৪০ বছরে নিম্নতম হবে: বিশ্ব ব্যাঙ্ক
প্রথমে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১২ দিন চিকিৎসার পর শনিবার বিকেলে তিনি যখন বেরোলেন, তখন অবশ্য তিনি আত্মবিশ্বাসী। বললেন, 'যখন আমি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল, প্রাথমিকভাবে আমার মনে হয়েছিল, দুনিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে দ্রুত আমি বুঝতে পারি, ভাইরাসকে হারাতে হবে। আমি এখন বাড়িতে। আমি আবার মুক্ত।'
আরও পড়ুন : করোনা সংকটে বিউটি কুইনের মুকুট খুলে মানুষের সেবায় ফিরল বাঙালি কন্যা ভাষা
ধরমনাথের সঙ্গে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তাঁর তিন বছরের নাতনি কাবিয়াও। তাঁদের পরপর তিনটি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। পরে ধরমনাথের ছোটো ছেলে বিজয়-সহ আরও চারজন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। প্রৌঢ় বলেন, 'করোনা যুদ্ধ জয়ের মন্ত্র হল - ইতিবাচক চিন্তা, সংকল্প, ইচ্ছাশক্তি, নিয়মানুবর্তিতা ও সামাজিক দূরত্ব।'
আরও পড়ুন : COVID-19 Updates: করোনা নজরদারিতে রাজ্যে বিশেষজ্ঞের অভাব, বলে দিল কেন্দ্র
করোনায় আক্রান্ত না হলেও কাবিয়ার মা জুলিকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। চোখের সামনে দেখেছেন, নিজের মেয়ে করোনার কবলে পড়েছে। জুলিরও একই বার্তা, ভয় পাবেন না। তাঁর কথায়, 'আপনি যদি ভয় পান, তাহলে কোনও সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে ওঠে। আপনাকে সাহায্য করার জন্য রয়েছেন চিকিৎসকরা। রয়েছেন সাধারণ মানুষও।' তবে প্রথমে যে ভয় ছিল না, সেটা অস্বীকার করছেন না জুলি। তবে সেই ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারায় তাঁরা লড়াইয়ে জোর পেয়েছিলেন। জুলি বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। যদি আমরা ভয় পেয়েই থাকতাম, মন থেকে ইতিবাচক ভাবনাচিন্তা বের করতে না পারতাম, তাহলে আমরা এত তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতাম না।' আর সেই ইতিবাচক ভাবনার ক্ষমতাটা যেন মেয়ের থেকেই পেয়েছিলেন জুলি। জানালেন, চিকিৎসা পর্বে একেবারে খেলার ছন্দে ছিল কাবিয়া।
আরও পড়ুন : সাত ঘণ্টার অপারেশনে জোড়া লাগল পঞ্জাব পুলিশের ASI-এর কাটা হাত
একই মনের জোরের কথা বলেছেন ধরমনাথ। তাঁর কথায়, 'ভাইরাসকে পরাজিত করতে মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রোজ গরম জল খেতে হবে। যদি আপনার উপসর্গ থাকে, লুকিয়ে যাবেন না। অন্যদের বলুন ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত করুন। আপনাকে সাহায্য করার জন্য লোক রয়েছে। একজন ১৫-২০ দিনের মধ্যে সেরে উঠতে পারবেন।' যদিও ধরমনাথের পরিবাবের সদস্যদের সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন : HDFC-তে এক শতাংশ শেয়ার কিনল চিনের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, সরকারকে সতর্ক করলেন রাহুল
পরিবারের বয়স্কতম সদস্য ছাড়া পাওয়ায় খুশি বিজয়। তিনি বলেন, 'আমরা অত্যন্ত খুশি যে, আমাদের মধ্যে বয়স্কতম ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। যাঁর কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট হয়েছিল। যাঁরা করোনাভাইরাসকে মারণ হিসেবে দেখছেন, তাঁদের জন্য এটা ইতিবাচক বার্তা।'