বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো!
রাজ্যে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। অথচ মহামারীর উপর বিশেষ নজরদারির চালানোর জন্য যতজন বিশেষজ্ঞ (এপিডেমিলজিস্ট) প্রয়োজন, তা নেই রাজ্যে।
আরও পড়ুন : করোনায় মৃতের সংখ্যা লক্ষাধিক, 'আতঙ্কিত' WHO প্রধান
তবে শুধু বাংলা নয়, দেশের আরও ১০ টি রাজ্যের দশা একই। সেই রাজ্যগুলি হল - দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ত্রিপুরা, গোয়া, হরিয়ানা, মিজোরাম, ত্রিপুরা, হিমাচল প্রদেশ, তেলাঙ্গানা, অসম ও ছত্তিশগড়। রাজ্যগুলিতে শুধু এপিডেমিলজিস্টের (মহামারী বিশেষজ্ঞ) ২২৭ টি শূন্যপদ রয়েছে। সঙ্গে ডেটা ম্যানেজার, পশু চিকিৎসক, আর্থিক উপদেষ্টা, মাইক্রোবায়োলজিস্ট মিলিয়ে শূন্যপদের সংখ্যা মোট ৩৮৪।
আরও পড়ুন : কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গড়তে বহু কষ্টে তৈরি হাসপাতালের দরজা খুলে দিলেন ক্যাবচালক
করোনা পরিস্থিতিতে দ্রুত সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে চিঠি লেখা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চিঠি অনুযায়ী, গত ৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে প্রথম বিষয়টি তোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপর ৭ এপ্রিলের চিঠিতে 'ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভিসেন্স প্রোগ্রাম (আইডিএসপি)'-এর আওতায় শূন্যপদ পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, 'করোনা সংক্রান্ত বিষয় নজরদারি'-র জন্য 'যোগ্যতাসম্পন্ন মানব সম্পদ' নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন : হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরিতে জোর রাজ্যে, করোনাযুদ্ধে অব্যর্থ প্রফুল্লচন্দ্রের দান
তবে এপিডেমিলজিস্ট পদ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জনগণের মধ্যে কোনও রোগের কারণ, প্রভাব, রোগের হারের মতো বিষয়গুলি খুঁটিয়ে দেখেন এপিডেমিলজিস্টরা। যা রোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে সেই রোগ ছড়িয়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা, তার উপরও নজর রাখেন এপিডেমিলজিস্টরা।
আরও পড়ুন : COVID-19 Updates: হাতিয়ার পরিসংখ্যান, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরুর দাবি ওড়াল কেন্দ্র
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিডেমিলজির এক অধ্যাপক জানান, প্রতিটি রাজ্যের একজন-সহ আইডিএসপি-র আওতায় সব জেলায় কমপক্ষে একজন এপিডেমিলজিস্ট থাকার কথা। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ভারতে ৬৪০ টি জেলা আছে। খাতায়কলমে তা বলা থাকলেও বাস্তবে অবশ্য অসংখ্য শূন্যপদ রয়েছে। কেন্দ্রের চিঠি অনুযায়ী, তেলাঙ্গানায় ২৬ জন, মধ্যপ্রদেশে ২০ জন, বিহার ও ছত্তিশগড়ে ২১ জন করে মহামারী বিশেষজ্ঞ কম রয়েছেন। এছাড়াও দিল্লি, গুজরাত এবং জম্মু ও কাশ্মীরে ১১ টি মহামারী বিশেষজ্ঞের পদ খালি পড়ে আছে।
আরও পড়ুন : Covid-19 এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ₹১০ লাখ দান বৃদ্ধার
কেন্দ্রের চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আমরা জানি, করোনাভাইরাসের উপযুক্ত মোকাবিলা ও আটকানোর জন্য সব রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে। করোনার মতো মহামারীর কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গায় যোগ্যতাসম্পন্ন মানব সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা পরিস্থিতিতে আইডিএসপি-র রাজ্য ও জেলাস্তরে সংগঠনে শূন্যপদ পূরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষত মহামারী বিশেষজ্ঞদের।'
আরও পড়ুন : COVID-19 Updates: বুকিং চালু থাকলেও ১৫ এপ্রিল থেকে ট্রেন চলা নিয়ে ধোঁয়াশা
কেন্দ্রের চিঠিতে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে মহামারী বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করতে হবে। এমনকী 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)'-র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য দফতরের অন্য কোনও পদে কর্মরত থাকলে তাঁকেও আইডিএসপি-র পদে নিযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতাভুক্ত এজেন্সির মাধ্যমেও নিয়োগ করা যাবে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দ্রুত বেতনের ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন : Coronavirus Testing Labs in Bengal: রাজ্যে কোন কোন বেসরকারি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে, দেখে নিন তালিকা
কেন্দ্রের এই মনোভাবের প্রশংসা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন ও রিসার্চের (পিজিআইএমইআর) অধিকর্তা জগৎ রাম বলেন, 'এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা যদি মূল জায়গা ও দেশ থেকে করোনা নির্মূল করে দিই, তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে করোনা আক্রান্তের হদিশ পাওয়া যেতে পারে। আমাদের এমন লোকজন চাই যাঁরা সারাক্ষণ সম্ভাব্য সংস্পর্শ আসা ব্যক্তিদের উপর রাখতে পারবে। শুধু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্য।' তাঁর মতে, ভাইরাসের ১০০ শতাংশ নির্মূল করে দেওয়া খুব কঠিন।
আরও পড়ুন : করোনা রুখতে বাড়িতেই মাস্ক তৈরি করুন, শিখে নিন ধাপে ধাপে পদ্ধতি