নিয়ম ভেঙে পরপর চারবার জেলা সম্পাদক। তরুণ মুখকে সামনে আনার পরিবর্তে বৃদ্ধতন্ত্রেই আস্থা রাখলেন সিপিএম নেতারা। এটাই দলের অন্দরে ক্ষোভের চোরাস্রোত তৈরি করেছিল। নিরঞ্জন সিহিকে এভাবে চতুর্থবার জেলা সম্পাদক করার জেরে পূর্ব মেদিনীপুরে সদস্যপদ রিনিউ করল না ৫০০ জন ‘কমরেড’। এই জেলায় অনেক তরুণ নেতা থাকা সত্ত্বেও নিরঞ্জন সিহিকে জেলা সম্পাদক করা হল। কেন এমনটা ঘটল? এই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। একদা এই কমরেডরা কঠিন সময়ে ঝান্ডা ধরেছেন। এখন তাঁরাই যেন ব্রাত্য। তাঁরা নিরঞ্জন সিহির টানা চতুর্থবার জেলা সম্পাদক হওয়া মেনে নিতে পারছেন না। তার ফলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলের ক্ষতি হল।
এদিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সিপিএমের এরিয়া কমিটির সংখ্যা ৬৪টি। এই এরিয়া কমিটিগুলির মধ্যে রয়েছে ৭১২টি ব্রাঞ্চ কমিটি। আর সব মিলিয়ে মোট ৮৩৮৫ পার্টি সদস্য ছিলেন। কিন্তু নিরঞ্জন সিহিকে চতুর্থবার জেলা সম্পাদক করতেই তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। এই কমরেডদের মধ্যে ৭৮৯৫ জন সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করিয়েছেন। বাকি আর প্রায় ৫০০ জন সদস্যপদ তা করাননি। জেলা পার্টির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, নিষ্ক্রিয়তা, লেভি ফাঁকি দেওয়া এবং আন্দোলনে ঝাঁঝ না থাকার জেরে এমনই সরে গিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই দলবিরোধী কাজের অভিযোগে এক বছরে ২০ জন সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর ৬০ জন প্রবীণ কমরেডের মৃত্যুও হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে প্রথম রিভিউ বৈঠক সফল, দেড় গুণ দামে জমি কিনবে রাজ্য সরকার
এই ঘটনার ফলে একদিকে আর্থিক ক্ষতি হল সিপিএমের অপরদিকে লোকবল কমে গেল। সামনে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে লোকবল কমে যাওয়ার অর্থ প্রচারে ধাক্কা খাবে। তার উপর নতুন প্রজন্ম আসছে না সিপিএমে। উলটো দিকে আছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি। তাদের সঙ্গে লড়াই করা এমন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি নিয়ে কার্যত অসম্ভব। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক সিপিএম সদস্যকে মাসিক লেভি দিতে হয়। অর্থাৎ আয়ের একটা অংশ। যার বেতন যত বেশি তাঁর তত বেশি লেভি দেওয়া নিয়ম। সেখানে এবার সেটা কমে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। আবার মিটিং, মিছিল ছাড়া কোনও ঝাঁঝালো আন্দোলন না থাকায় বহু কমরেড সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করেনি। তাঁরা লেভি দিতেও চান না।
নতুন বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁশকুড়ায় দলের জেলা সম্মেলন হয়েছে। জেলা সম্মেলন নিরঞ্জন সিহিকে টানা চারবার জেলা সম্পাদক করা হয়েছে। দলের অন্দরে তা নিয়ে হইচই শুরু হয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘ইব্রাহিম আলি এবং পরিতোষ পট্টনায়কের মতো দু’জন নেতা থাকা সত্ত্বেও নিয়ম ভেঙে নিরঞ্জন সিহিকে পুনরায় জেলা সম্পাদক করে আলিমুদ্দিনের নেতারা। তাই সদস্য পুনর্নবীকরণ অনেকে করাননি। লেভি দিতেও তাঁরা চান না।’