হাওড়া সদরের প্রাক্তন সাংসদ তথা হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র সিপিএম নেতা স্বদেশ চক্রবর্তী প্রয়াত হয়েছেন। সোমবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। হাওড়ার বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়সজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন স্বদেশবাবু। দু’বার সাংসদ হয়েছিলেন স্বদেশ চক্রবর্তী। তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোমবার রাত থেকে তাঁর হাওড়ার বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করেন সিপিএম কর্মীরা। আজ, মঙ্গলবার সকালে একাধিক নেতাকে দেখা যায়। প্রত্যেকেই শেষশ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন। স্বদেশ চক্রবর্তীর বাড়িতে যান রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়। মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।
এদিকে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় সিপিএমের যে নেতাদের দাপুটে বলা হতো স্বদেশ চক্রবর্তী ছিলেন সেই তালিকায়। একটা সময় ছিল যখন হাওড়ার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা কেউ স্বদেশবাবুকে না জানিয়ে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন না। এমনকী তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘হাওড়ার জ্যোতি বসু’। অনেকে ‘হাওড়ার মুখ্যমন্ত্রী’ তকমা দেন। তাঁর যে দাপট ছিল তাতে ওই এলাকার বিরোধীরা বলতেন ‘স্বদেশের দেশ’। অতীতের কথা আলোচনা করলে এই তথ্য বেরিয়ে আসে অনায়াসে। ১৯৪৩ সালে বাংলাদেশের খুলনায় জন্ম হয় স্বদেশ চক্রবর্তীর। আর ১৯৬১ সালে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সিপিএম পার্টিতে যোগ দেন স্বদেশ চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মণ শেঠের বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ডাক্তারিতে এনআরআই কোটায় দুর্নীতির অভিযোগ
অন্যদিকে স্বদেশ চক্রবর্তী ব্যাঙ্ক অফ বরোদায় চাকরি করতেন। এই পেশাতে থেকেও সিপিএম করতেন। তবে ১৯৬৩ সালে সিপিএমের পার্টি সদস্য হন তিনি। তারপর ১৯৭১ সালে হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য ও ১৯৮৯ সালে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হাওড়া লোকসভা সদর কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন। আবার ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত হাওড়া পুরসভার মেয়র ছিলেন স্বদেশ চক্রবর্তী। আজ, মঙ্গলবার স্বদেশবাবুর দেহ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হবে কদমতলায় সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে। তারপর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে উত্তর হাওড়ার জোনাল পার্টি অফিসে। সেখান থেকে সালকিয়ার বাঁধাঘাট শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
এছাড়া হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত। ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এইচআরবিসি’র চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাঁর পরিবারে স্ত্রী, কন্যা, জামাই, নাতি রয়েছেন। হাওড়ার উন্নয়নে স্বদেশ চক্রবর্তীর যে বিশেষ ভূমিকা ছিল, সে কথা আজ উল্লেখ করেন অরূপ রায়। স্বদেশবাবুর বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। তবে তাঁর মেয়র থাকাকালীন হাওড়া শহরে বেআইনি বাড়ি নির্মাণ, পুকুর বোজানো, প্রমোটাররাজ, সিন্ডিকেটরাজের রমরমা ছিল বলে বিরোধীদের অভিযোগ।