বাংলায় ৩৪ বছরের বাম শাসনকে হঠাতে কতকটা টাটাদের ‘সাহায্য’ নিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা ঘিরে স্থানীয়দের ‘আপত্তি’, ‘অসন্তোষ’-কে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আন্দোলন। বদলে দিয়েছিলেন বাংলার রাজনৈতিক হওয়ার গতিবেগ ও দিকনির্দেশনা। তারপর বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলার মসনদে থেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝেছেন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য শিল্প কতটা প্রয়োজনীয়। আক তাই সিঙ্গুরের সেই আন্দোলকারী ভাবমূর্তির ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে আজ তিনি শিল্প বান্ধব মুখ্যমন্ত্রী। দেউচা পাচামিতে তিনি কয়লাখনি প্রকল্পের জন্য বড় ঘোষণা করেছেন। তবে এবার তাঁর এই প্রকল্পের বিরুদ্ধেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে। আর সেই অসন্তোষের সুযোগকে কাজে লাগাতে মরিয়া বাম। এ যেন সিঙ্গুর পর্বের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে দেউচায়।
দেউচা নিয়ে ক্রমবর্ধমান জটিলতার মাঝেই শনিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দাবি করেন, বীরভূমের দেউচা পাচামি কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের ‘আন্দোলনের’ পাশে থাকার বার্তা দেন বাম নেতা। শনিবার সিপিএমের পঁচিশতম পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্মেলনের প্রথম দিনে উপস্থিত হয়েছিলেন সূর্যকান্ত। দেউচা নিয়ে তৈরি জটিলতা প্রসঙ্গে সেখানে সূর্যকান্ত বলেন, ‘আমরা তাঁদের (আন্দোলকারীদের) পাশে আছি। তাঁদের আশঙ্কার ভিত্তি আছে।’ শিল্পের বিপক্ষে অবশ্য বলেননি সূর্যকান্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘দেউচা পাচামিতে প্রকল্প না হওয়ার কী আছে? কিন্তু আমরা যে প্রশ্ন রেখেছি, সরকার তার জবাব দেয়নি। সরকারের বক্তব্যে স্বচ্ছতা নেই। সরকারের বক্তব্যে মধ্যে যুক্তি, বিশ্বাসযোগ্যতা কিছুই নেই।’
সূর্যকান্ত মিশ্রর স্পষ্ট দাবি, ‘দেউচা পাচামিতে যে ভাবে যা চলছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। আমরা তাঁদের পাশে আছি।’ এর আগে দেউচায় গিয়ে বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য হাতে লাঠি তোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন আন্দোলকারীদের। যার জেরে তাঁ বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলাও হয়েছে। এরই মাঝে গতকালই স্থানীয়রা লাঠি-তির-ধনুক নিয়ে মিছিল করেন। পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে এই মিছিল বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় আদিবাসীরা। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে দেউচা খুব শীঘ্রই শাসক দলের জন্য গলার কাঁটায় পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের।