আপাদমস্তক নাস্তিক তাঁরা। নিজেরাই সেই দাবি করেছেন বহুবার। অতীতে এই নিয়ে অনেক ঘটনাও আছে। কিন্তু এখন শূন্য বিধানসভায় সদস্য প্রবেশ করাতে মরিয়া তাঁরা। তাই আগামীর দিকে তাকিয়ে এখন রাস্তা–বদল করতে দেখা গেল তাঁদের। জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালের রাস্তা ধরে বীরপাড়া বাসস্টপ ছাড়িয়ে কিছুটা হাঁটলে তবেই পড়বে মাঝেরচর। এখান থেকে ২ কিলোমিটারের বেশি হেঁটে পৌঁছতে হবে মেলায়। ফেব্রুয়ারি মাসেই ঝাঁঝালো রোদে, গরমে ভক্ত–দর্শনার্থীদের পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে স্নেহভরা কোল পেতে বসেছে বামেরা। নদিয়ার মাঝেরচরের কুম্ভমেলায় গুড়, বাতাসা বিলি করছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং ছাত্র সংগঠন এসএফআই।
শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তবে ঘটেছে। ডিওয়াইএফআই–এসএফআইয়ের হিসেব বলছে, টানা তিনদিন তাঁরা পাঁচ হাজারের বেশি মানুষজনের হাতে গুড়–বাতাসা পানীয় জল তুলে দিয়েছেন। তবে নীতিতে তাঁরা আগের মতোই অনড় ছিলেন। বামেদের নীতি, গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে না দিয়ে খাবার তুলে দেওয়া। লকডাউনের সময় শ্রমজীবী ক্যান্টিনের মাধ্যমে সেই নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল। এবার দুই বাম সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, কুম্ভমেলায় এই পরিষেবা আসলে সামাজিকতা এবং কর্তব্যবোধ। আর মানুষ তো মানুষের জন্য। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে এটা বামেদের জনসংযোগের কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
ঠিক কী দেখা গিয়েছে? কল্যাণীতে সিপিএমের ছাত্র–যুব সংগঠন কুম্ভমেলার মূলমঞ্চের আগেই এই ব্যবস্থা করেছে এই পরিষেবা দেওয়ার। লাল কাপড়ে মোড়া স্টলে আসছেন মানুষ। কিন্তু তাতে ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে সন্দিহান সবপক্ষই। কিন্তু তারপরও শুধু গুড়–বাতাসা বিলি করে ক্ষান্ত থাকছেন না তাঁরা। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছেন তাঁরা। গাইড হিসাবে কাজ করছেন রেড ভলেন্টিয়াররা। তবে খোঁচা মেরে অনেকে বলছেন, ঠেকায় পড়লে বাঘও গাছে ওঠে।
কী বলছেন বাম–তৃণমূল নেতৃত্ব?এই গুড়–বাতাসা দাওয়াইয়ের কথা শোনা যেত বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মুখে। এখন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট জেলবন্দি। আর এই গুড়–বাতাসা এখন বাম রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ে সিপিএমের কল্যাণী এরিয়া কমিটির সম্পাদক সৌমেশ কংসবণিক বলেন, ‘গুড়, বাতাসা কী কারও পেটেন্ট নেওয়া নাকি? আমরা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাইনি। আর পাঁচটা সামাজিক অনুষ্ঠানের মতোই শুধু জনসংযোগ করেছি।’ আর তৃণমূল কংগ্রেসের রানাঘাট সংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘ক্ষমতায় ফিরতে বামেরা কবে কালীঘাটে মানত করছে, সেটাই দেখার অপেক্ষায় আছি।’ রানাঘাটের বিজেপি সংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘সিপিআইএম বুঝেছে তোষণের রাজনীতি করে বাংলায় আর জায়গা হবে না। তাই মূল স্রোতে ফিরছে।’