রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জবরদখল করা পার্টি অফিসগুলির মধ্যে ৮০% গত লোকসভা নির্বাচনের পরে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে সিপিএম। সম্প্রতি এমনই দাবি করেছেন বাম দলের নেতারা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনায় গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিরোধীতার জেরে বিজেপি প্রার্থীদের পক্ষে বাম ক্যাডারদের এক বড় অংশ ভোট দিয়েছিলেন বলে যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তার সপক্ষেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘রাজ্যে বামেদের নিজস্ব ভোট ধরে রাখতে এবং তৃণমূল-বিরোধী ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরানোর উদ্দেশেই বামেদের পার্টি অফিস খুলতে দিয়েছে শাসকদল।’
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন শেষ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষে পরিণত হয়, যাতে বড়সড় লাভ করে বিজেপি।’
গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয়লাভ করেন বিজেপি প্রার্থীরা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া ৩৪টি আসনের জায়গায় গত নির্বাচনে তৃণমূলের দখলে থাকে মাত্র ২২টি আসন। রাজ্যে বিজেপির ভোট বেড়েছে প্রায় ২৩%, যার ফলে যথেষ্ট চাপে পড়ে ঘাসফুল শিবির।
সিপিএম রাজ্য শাখা সংগঠনের সদস্য অমল হালদারের দাবি, তৃণমূল কর্মীদের হামলার ভয়েই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন জানান দলীয় ক্যাডারদের একাংশ। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘তাঁরা এখন ফিরে এসে পার্টি অফিস খুলছেন, কারণ সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী আন্দোলন ফের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে উঠেছে।’
অমল হালদারের দাবি, রাজ্যজুড়ে ৫০০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ছোট পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার করতে সফল হয়েছে সিপিএম, যেগুলি গত ৭ বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের দ্বারা ভাঙচুর এবং দখল করা হয়েছিল।
সিপিএম জেলা ইউনিটের একাধিক নেতা-সহ বাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলে হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে ৮০%-৯৫% পার্টি অফিস ফিরে পাওয়া গিয়েছে। এই বিষয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও আপত্তি ওঠেনি বলেও তাঁদের দাবি।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা ইউনিট সম্পাদক অনন্ত রায়ের মতে, ‘২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমাদের প্রায় ১৫০টি পার্টি অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল তৃণমূল। তার মধ্যে ৯০% পুনরুদ্ধারে আমরা সফল হয়েছি।’
বাঁকুড়া জেলা ইউনিট সম্পাদক অজিত পতি বলেন, ‘আমাদের জেলায় বারোটির বেশি গুরুত্বপূর্ণ পার্টি অফিস বন্ধ করকে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি ছাড়া সমস্ত অফিসই ফের খোলা গিয়েছে।’
২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার চার দিনের মধ্যে ঝাড়গ্রামের একদা মাওবাদী অধ্যুষিত লালগড়ের মণিদহতে সিপিএমের স্থানীয় পার্টি অফিস বন্ধ করে দেন শাসকদলের কর্মীরা। সেই পার্টি অফিসও এবার পুনরুদ্ধার হওয়ার পথে। আগামী মাসে অফিসটি ফের খোলা হবে বলে জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামে সিপিএমের জেলা নেতা ডহরেশ্বর সেন।
তাঁর দাবি, ‘পুলিশি ঝামেলা এড়াতে আমাদের কর্মীদের একাংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে তৃণমূল ও পুলিশের হাতে বিজেপি কর্মীদেরও হেনস্থা হচ্ছে বলে দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের অধিকাংশ।’
এ দিকে প্রতিপক্ষের ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে জেলায় জেলায় ফের সিপিএমকে পার্টি অফিস খুলতে দেওয়ার জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল ও বিজেপি, দুই পক্ষই। বিজেপি রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের কোনও ভূ্মিকা নেই।’
অন্য দিকে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘সিপিএম ও বিজেপির মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে। কর্মীর অভাবে সিপিএম নিজেই নিজেদের পার্টি অফিসগুলি বন্ধ করেছিল। এখন বিজেপির সাহায্য নিয়ে ফের সেগুলি খোলার চেষ্টা করছে।’