ঘূর্ণিঝড় রেমাল বঙ্গে প্রভাব ফেলায় গ্রামবাংলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাণও এই কারণে গিয়েছে অনেকের। তবে সবাই যখন নিশ্চিন্ত হলেন রেমাল রাজ্য ত্যাগ করেছে বলে তখনও তার রেশ টের পেলেন গ্রামবাংলার মানুষজন। মর্মান্তিক মৃত্যু হল আজ, মঙ্গলবার দুই কৃষকের। রেমালের জের এখনও রয়ে গিয়েছে বাংলায়। তাই আজ সকালে পটল ক্ষেতে ফুল ছোঁয়াতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধ কৃষকের। আর সেটা দেখতে পেয়ে ওই কৃষককে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল আরও একজন কৃষকের। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে বনগাঁ থানার শিমুলিয়া এলাকায়।
রবিবার থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল বঙ্গে দাপট দেখিয়েছে। আর তাতেই ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি পড়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সোমবার দিনভর বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল কলকাতা থেকে গ্রামবাংলার সর্বত্র। তবে বিকেলের দিকে আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়। ফলে নিত্যদিনের মতো মঙ্গলবার সকালে নিজের পটল খেতে যান বনগাঁর শিমুলিয়ার বাসিন্দা অনিল পাল (৬৩)। তিনি বুঝতেও পারেননি সেখানে বিপদ রয়েছে। তাই এগিয়ে যেতেই পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে পা দেন তিনি। এই তার ছিড়ে পড়েছিল পটলের ক্ষেতে। ওই বৃদ্ধ পটলে ফুল ছোঁয়ানো মাত্রই বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: ‘সনাতন বিরোধী তৃণমূল’ বিজ্ঞাপন অব্যাহত বিজেপির, নির্বাচন কমিশনে নালিশ শাসকদলের
এই দৃশ্যটি দেখতে পান আর একজন কৃষক। তবে তিনি তখন বোঝেননি কৃষক অনিল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। তাই তখন রাস্তা দিয়ে চাষের কাজে যাওয়া প্রতিবেশী আরও এক কৃষক শরীর খারাপ হয়েছে ভেবে ছুটে আসেন বাঁচাতে। কিন্তু লুটিয়ে পড়া বৃদ্ধ কৃষককে বাঁচাতে গিয়ে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। পর পর এই দুই কৃষকের মৃত্যুতে আজ শোকের ছায়া নেমে এসেছে কৃষক পরিবার তথা গোটা গ্রামে। এমন ঘটনা ঘটবে তা কেউ ভাবতেও পারেননি। এই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই আলোড়ন দেখা দেয়। বড় ক্ষতি হয়ে গেল বলে মনে করছেন কৃষকদের পরিবারের সদস্যরা।
এই ঘটনার পরই স্থানীয় বাসিন্দারা কোনওরকমে দুই কৃষককে উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁদের। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে। রেমালের তাণ্ডবে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখনও পর্যন্ত ৮। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনা ঘটেছে এবং তার জেরে মৃত্যু হয়েছে। তবে এখন গোটা গ্রাম আতঙ্কে ভুগছে। কারণ আর কোথায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে, কোথায় পা লাগবে, আর মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে—এসব নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।