আজ সকাল ১০ থেকে ১১টার মধ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আর তা মোকাবিলায় সেনা নামানো হল দিঘায়। জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। গতকাল রাত পর্যন্ত দুই মেদিনীপুর জেলার প্রায় সাত লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে সরানো হয়েছে। তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের ৪ লক্ষ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিন লক্ষ বাসিন্দা রয়েছেন। ঝাড়গ্রামেও ২০ হাজার মানুষকে রেসকিউ সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। আর ৫০ জনের সেনাবাহিনীর একটি দল দিঘায় রয়েছে। সমুদ্র উপকূল থেকে এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দিঘা থেকে আর সামান্য দূরে রয়েছে ইয়াস। ধামড়ায় ইতিমধ্যেই ল্যান্ডফল করেছে ঘূর্ণিঝড়। এখন ফুঁসছে সমুদ্র। দুর্যোগ মোকাবিলায় সমুদ্রবাঁধ পরিদর্শন করেন সেচ ও জলপথ দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি এবং ডিএসডিএ’র চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর। দিঘা এবং শঙ্করপুরে কোনও হোটেলে পর্যটক রাখা যাবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। প্রতিটি বিডিও অফিস এবং থানাতেও কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
এদিন জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা সবংয়ের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যান। সবং বিধানসভা কেন্দ্রের ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য সবংয়ে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, ৮১টি শিবিরে ১২হাজার মানুষকে সরানো হয়েছে। তাঁদের শুকনো এবং রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। ডেবরার বিধায়ক তথা মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর এদিন ওই বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় কাঁচাবাড়ি থেকে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
উপকূল এলাকার মানুষজনকে মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার, ফ্লাড শেল্টার, আইসিডিএস কেন্দ্রে, স্কুলে ও কলেজে সরানো শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সারাদিন আরও তিন লক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনকে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়। আজ সকাল থেকেই দিঘার সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্রের জল বারবার গার্ডওয়াল টপকে মেরিন ড্রাইভের রাস্তায় এসে পড়েছে। শঙ্করপুরে সমুদ্রবাঁধ ভেঙে নোনাজল গ্রামে ঢুকে গিয়েছে। সকাল থেকেই দিঘায় ভারী শুরু বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই দিঘা ও শঙ্করপুর এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শঙ্করপুর, পেটুয়াঘাট–সহ বিভিন্ন বন্দরে সারি সারি মাছ ধরার ট্রলার চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচাবাড়ি এবং খড়ের পালুই বাঁচাতে কাঁথি মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় খুঁটি পুঁতে মোটা দড়ি দিয়ে তা বেঁধে রাখা হয়েছে। গবাদি পশুকে সরিয়ে আনা হয়। এগরা–২ নম্বর ব্লকে বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে অটোয় মানুষজনকে তুলে স্থানীয় বিদুরপুর বিদ্যানিকেতন উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খেজুরি–১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়। হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন। তবে কলকাতায় ঘণ্টায় ৬৫ থেকে ৭৫ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হওয়া। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার। ইয়াস মোকাবিলা প্রস্তুত রয়েছে সেনা, বায়ু সেনা, নৌসেনা, উপকূলরক্ষী বাহিনী, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।