অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া পকেটে নেই। তাই নিজের টোটো করেই অসুস্থ স্ত্রীকে মুর্শিদাবাদ থেকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার পথে চলেছেন বৃদ্ধ। মাঝে ডানকুনিতে টোটো চার্জ দেওয়ার জন্য দাঁড়ান। তখনই ভাগ্যে বদল আসে বৃদ্ধের। মাঝরাতে এই খবর যায় ডানকুনি পৌরসভায়। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতার দূরত্ব ২৩৫ কিলোমিটার। কিন্তু মুর্শিদাবাদ থেকে কেন কলকাতা? আসলে ওই বৃদ্ধের স্ত্রীকে প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তারপর সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আবার সেখান থেকে শাটল কর্কের মতো এসএসকেএম হয়ে শম্ভুনাথে ভর্তি হলেন তিনি। অর্থাৎ চারটি হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হলেন রোগী। আর তাতেই প্রশ্নের মুখে পড়ল রেফারেল ব্যবস্থা।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? স্ত্রী শিবানী বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ। দিন দিন শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। কলকাতায় স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সংসারে আছে অভাব–অনটন। তাই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে পারেননি স্বামী উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টোটো চালান। নিরুপায় অবস্থায় স্বামী অসুস্থ স্ত্রীকে টোটোতে বসিয়ে রওনা দিলেন কলকাতায়। পথে কয়েকজন তাঁকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তাঁরা জানতে পারেন মুর্শিদাবাদ জেলার সালারের বাসিন্দা উপেন্দ্র। অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছেন। এই ছড়িয়ে পড়ে ডানকুনিতে। খবর যায় ডানকুনি পুরসভার চেয়ারম্যান হাসিনা শবনমের কানে। তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন। মাঝরাতে স্ত্রী শিবানীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন উপেন্দ্র। স্ত্রীর পাশে বসে চোখ ফেলেন। আর হাসিনা শবনমের প্রতি কৃতজ্ঞতায় প্রণাম করলেন।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করছেন পিজিটি, মুখ্যসচিবকে চিঠি জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের
তারপর ঠিক কী ঘটল? উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী শিবানী দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। অর্থের অভাবে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে পারেননি। তাই দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা টোটো চালিয়ে ডানকুনি আসেন রাত ১০টা নাগাদ। সেখান থেকে আরও আটঘণ্টা লাগবে কলকাতায় পৌঁছতে। কিন্তু সেটা করতে হল না। ডানকুনি পুরসভার চেয়ারম্যান হাসিনা শবনমের সাহায্যে থামল বৃদ্ধের সেই কঠিন লড়াই। তখন উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মাঝরাতে অচেনা জায়গায় সাহায্য পাওয়ার কথা কল্পনাও করিনি। পুরসভার চেয়ারম্যান যা করেছেন তা সারাজীবন মনে রাখব।’
আর কী জানা যাচ্ছে? টোটো চালিয়ে উপেন্দ্র সংসার চালান। অভাবের সংসারে কোনও রকমে দুবেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারলেও স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগার করতে পারছেন না। শিবানীদেবী অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে বললেন, ‘আমার চিকিৎসা করাতে করাতে মানুষটা নিঃস্ব হয়ে গেলেন। মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা যেতে অ্যাম্বুলেন্সে পাঁচ হাজার টাকা লাগত। কলকাতায় কতদিন থাকতে হবে, চিকিৎসার জন্য কত খরচ হবে জানি না। স্বামী আর ছেলে মিলে ঠিক করেছিল টোটোতে করে গেলে পাঁচ হাজার টাকা বেঁচে যাবে।’ ডানকুনি পুরসভার চেয়ারম্যান হাসিনা শবনমের কথায়, ‘এই ঘটনার কথা শুনে চমকে যাই। ওই দম্পতির জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। দ্রুত শিবানীদেবী সুস্থ হয়ে উঠুন।’