পকেটে টাকা ভর্তি মানিব্যাগ ছিল। কিন্তু টোটো থেকে নামার পর আর সেটা পকেটে ছিল না। এমন ম্যাজিক করা ঘটনা ঘটেছিল মিরিকের কুমার ছেত্রীর সঙ্গে। মুহূর্তে তাঁর মাথায় এল তাহলে কেউ পকেটমারি করেছে। টোটোয় কি তাঁর পাশে পকেটমার বসে ছিল? এই প্রশ্ন কুমার ছেত্রীর মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। কিন্তু মানিব্যাগে তো এটিএম কার্ড–সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি ছিল। এমনকী প্রচুর টাকাও ছিল। সেক্ষেত্রে তো পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। মাথায় প্রবল দুশ্চিন্তায় নিয়ে তখন কুমার ছেত্রী এগিয়ে চলেছেন থানার দিকে।
এতগুলি টাকা খোয়া গেলে কেমন করে চলবে? এই প্রশ্নই তখন ভাবিয়ে তুলেছে কুমার ছেত্রীকে। কারণ ওটা পাওনা টাকা ছিল। যা আদায় করতে তিনি শিলিগুড়ি এসেছিলেন। সেই টাকা হাতে পেয়েই সেখান থেকে ফেরার জন্য দার্জিলিং মোড়ে মিরিকের জিপ ধরতে টোটোয় চড়েন। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। তাহলে মানিব্যাগ গেল কোথায়? যা টোটো থেকে নেমে আর খুঁজে পাননি তিনি। মানিব্যাগ হারিয়ে বুধবার দুপুরে মিরিকের কুমার ছেত্রী তখন ভেঙে পড়েছেন। নানা জায়গায় খুঁজতেও শুরু করেছেন। কোথায় মিলল না টাকা ভর্তি মানিব্যাগ। তাতে আরও ভেঙে পড়লেন তিনি।
আরও পড়ুন: এক কোটি পার করে গেল গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীর সংখ্যা, মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত পুণ্যস্নান চলবে
এই আবহে যখন কুমার ছেত্রী রীতিমতো পথের ধারে হাপিত্যেশ করছেন বেজে উঠল মোবাইল ফোন। অচেনা নম্বর দেখে ফোন ধরবেন না ঠিক করলেন। আবার মনে হল দেখা যাক, কে ফোন করছে? এই প্রশ্ন মনে আসতেই ফোনে আসা কলটি ধরলেন। আর ওই ফোনে অপর প্রান্ত থেকে পুলিশের পরিচয় দিয়ে কথা বলা কণ্ঠস্বরে চোখের জল শুকিয়ে গিয়ে চোখ চিক চিক করে উঠল। পিঠ দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল কুমার ছেত্রীর। কারণ শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবল ততক্ষণে জানিয়ে দিয়েছেন কুমার ছেত্রীর মানিব্যাগের সন্ধান।
তখন কুমার ছেত্রীকে ফোন করে ওই ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, ‘আপনার মানিব্যাগ আমার কাছে জমা রয়েছে। আপনি এসে সেটা নিয়ে যান।’ এই কথা শুনেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তিনি। দার্জিলিং মোড়ে তখন জনবহুল পরিস্থিতি। সেখান থেকে অশোক সরকার নামে এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে খুঁজে বের করা বেশ কঠিন কাজ। তবু ভিড় ঠেলে, যানজট এড়িয়ে পৌঁছয় মিরিকের বাসিন্দা কুমার ছেত্রী। তারপর অশোক সরকার কনস্টেবলের সঙ্গে দেখা করেই বললেন, ‘আমার মানিব্যাগটি কোথায়? আপনি ফোন করেছিলেন। মানিব্যাগে টাকাগুলি আছে তো?’ হেসে ফেলেন ট্রাফিক কনস্টেবল অশোক সরকার। আর বলেন, ‘একসঙ্গে এতগুলি প্রশ্ন করলে উত্তর দেবো কেমন করে।’ তারপর কুমার ছেত্রীর হাতে তুলে দিলেন মানিব্যাগ। আর মানিব্যাগ পেয়েই খুলে দেখে নিলেন হাত সেখানে নগদ সাড়ে ১১ হাজার টাকা আছে কিনা। তারপর পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে কুমার ছেত্রীর বক্তব্য, ‘আমি ভাবতেও পারিনি হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ ফেরত পাব। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’ জবাবে কনস্টেবল বললেন, ‘এটুকু করতে না পারলে লোকে পুলিশকে ভরসা করবে কেন?’