করোনা সংক্রমণ এবং তার জেরে মৃত্যুর নিরিখে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দার্জিলিং। এমন এক জেলা যার তিন–চতুর্থাংশ পাহাড়, জঙ্গল আর চা বাগানে ভরা সেখানে করোনাভাইরাসের এমন প্রাদুর্ভাব চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে।
৩১ অগস্ট পর্যন্ত দার্জিলিংয়ে করোনার জেরে মারা গিয়েছেন ৭৫ জন এবং সব মিলিয়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০৫৬, যা উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে জনবহুল জেলা মালদার থেকে অনেকটাই বেশি। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ অগস্ট পর্যন্ত মালদায় সব মিলিয়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯৭৮ এবং মারা গিয়েছেন ৩৯ জন। রাজ্যের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন জনসংখ্যাবিশিষ্ট জেলা দার্জিলিংয়ে মোট অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ৭৩৬। যা উত্তরবঙ্গে সর্বোচ্চ।
এই পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞরা শিলিগুড়িকেই দোষারোপ করেছেন। কারণ দার্জিলিং জেলার অন্যতম মহকুমা শিলিগুড়ির বেশিরভাগটাই সমভূমি এলাকা এবং এখানকার বাসিন্দারাই মূলত করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দার্জিলিংয়ের তিনটি পার্বত্য মহকুমা— দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াংয়ে খুব কম সংখ্যক করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক কেন্দ্র এবং ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের প্রবেশদ্বার হল শিলিগুড়ি। এর জেরে এই মহকুমায় জনসংখ্যা অনেকটাই বেশি এবং রোজ এখান থেকে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন দিকে লোকজন যাতায়াত করেন। এই শহরের জন্যই দার্জিলিং জেলায় করোনা সংক্রমণ এতটা বেশি।’
উল্লেখ্য, সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে শিলিগুড়ির ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। কারণ, এখানেই রয়েছে বেশিরভাগ মাছের আড়ত ও সবজির বাজার। এই শহুরে এলাকা থেকে দার্জিলিংয়ের পার্বত্য এলাকা ও চা বাগান সংলগ্ন জায়গাগুলিতে খুবই কম সংখ্যক করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।
জিটিএ–র স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর সামদেন ডুকপা জানান, দার্জিলিং জেলার ৯০ শতাংশ করোনা আক্রান্ত মানুষ শিলিগুড়ির বাসিন্দা। রবিবার পর্যন্ত দার্জিলিংয়ে মোট ৪৯৪১টি পজিটিভ কেস পাওয়া গিয়েছে আর তার মধ্যে মাত্র ৪৭৮টি কেস পাহাড়ি এলাকার। দার্জিলিং জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ৭৫ জনের মধ্যে মাত্র ১২ জন দার্জিলিং, কালিম্পং বা কার্শিয়াং মহকুমার বাসিন্দা।
পার্বত্য এলাকায় ও চা বাগানের আশপাশে যে বসতি রয়েছে সে সব জায়গায় সংক্রমণ অনেক কম। তার কারণ, লকডাউনের শুরু থেকেই এখানকার বাসিন্দারা কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিয়ম মেনে বজায় রাখা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব, মানা হয়েছে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহ অধ্যাপক ডাঃ কল্যাণ খানের মতে, ‘পাহাড়ি এলাকার গ্রামগুলিতে যাঁরা বেশ কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরেছেন তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। এই সব এলাকায় জনবসতি খুবই কম। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকায় বাসিন্দাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকটা বেশি। এই সব কারণেই এই এলাকাগুলিতে সহজে বাসা বাঁধতে পারেনি করোনা।’