বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল ও সংগঠন তাদের মতো করে রাজ্যভাগের দাবি তুলছে। তবে মূলস্রোতে থাকা কোনও রাজনৈতিক দল সরাসরি রাজ্যভাগের দাবি তোলে না সচরাচর। তবে এর আগে বিজেপির একাধিক নেতানেত্রী উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু দলের তরফ থেকে শেষ পর্যন্ত তাতে জল ঢালা হয়।
তবে এবার মুর্শিদাবাদের লালবাগে দেখা গেল একেবারে অন্য ছবি। সেখানে বিজেপির নেতা কর্মীরা যে মিছিল বের করলেন তা কার্যত রাজ্যভাগের দাবিতেই। মালদা ও মুর্শিদাবাদকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবিতে মিছিল করলেন বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ সহ অন্যান্যরা। এমনকী তাঁর দাবি, তিনি এর আগেই মালদা, মুর্শিদাবাদকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। এবার একেবারে মিছিলে শামিল হলেন তিনি।
বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে এদিন মিছিল বের হয়। এতদিন দেখা যেত চিঠি, বক্তব্যের মধ্যে তাঁদের দাবি সীমাবদ্ধ থাকত। তবে এবার লালবাগে মিছিল করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির দাবি তুললেন বিজেপি বিধায়ক। তবে তাঁর এই দাবির সঙ্গে বিজেপি কতটা একমত তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি সংসদে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির দাবিতে সরব হয়েছিলেন বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে। বাংলা -বিহারের ৫ জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির দাবি করেছিলেন নিশিকান্ত। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলার দুটি জেলা ও বিহারের তিন জেলা নিয়ে ইউটি করতে হবে।
তিনি বলেছিলেন, মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে এসে আমাদের এখানে এসে হিন্দুদের উপর অত্য়াচার চালাচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের পুলিশ কোনও কাজ করতে পারছে না। মুসলিমদের সংখ্য়া বাড়ছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করুন। এনআরসি লাগু করুন ওই এলাকায়। কিছু না হলেও সংসদীয় কমিটি পাঠান।
বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে সেদিন সংসদে বলেছিলেন, আমাদের এলাকায় আদিবাসী জনসংখ্য়া ক্রমশ কমছে। আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিয়ে হচ্ছে। এই যে আদিবাসী জনসংখ্য়া কমছে তা নিয়ে জেএমএম কিছু ভাবছে না।
নিশিকান্ত দুবে বলেছিলেন, সংবিধান আজ বিপদের মধ্যে পড়েছে। আমরা গরিব, আদিবাসী, দলিত, মহিলাদের কথা বলছি। রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকার সকলেরই উচিত প্রতি নাগরিকের কাছে পৌঁছে যাওয়া। আমি সাঁওতালপুর্না এলাকা থেকে এসেছি। যখন এই এলাকা বিহার থেকে বেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে মিশেছিল তখন আদিবাসীদের সংখ্য়া ছিল ৩৬ শতাংশ। এখন সেটাই কমে হয়ে গিয়েছে ২৬ শতাংশ। এই যে ১০ শতাংশ ট্রাইবাল তাঁরা গেলেন কোথায়? শুধু ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন ওরা। আমাদের রাজ্যে জেএমএম কিছু করছে না। আমাদের এলাকায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ক্রমশ বাড়ছে।
তিনি বলেন, মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে লোকজন ঝাড়খণ্ডে এসে অত্য়াচার চালাচ্ছে। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারের পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বাংলার মালদা- মুর্শিদাবাদ ও বিহারের কয়েকটি জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত এলাকা তৈরির দাবি তোলেন তিনি।
মালদা-মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বিহারের কিষানগঞ্জ, আরারিয়া কাটিহারকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তোলেন তিনি। তাঁর দাবি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করুন। না হলে হিন্দু খালি হয়ে যাবে।
আর বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্করের দাবি, ২০২২ সালেই তিনি কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই দাবি রেখেছিলেন।