রাতে ওড়িশায় পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন বাবা। তখনও খবরটা এসে পৌঁছয়নি মাটিয়ার নেহালপুর সর্দারপাড়ার বাসিন্দা কাশ্মীর মণ্ডলের কানে। শনিবার ভোরে উঠে যথারীতি মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। হঠাৎ বাড়িতে উঠল কান্নার রোল। পড়া ছেড়ে তড়িঘড়ি উঠে এসে জানতে পারল শুক্রবার রাতে ওড়িশার কটকের কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবা সুরজ মণ্ডলের।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। গুলিয়ে গেল ভূগোলের সব পড়া। আর কি সে পারবে খাতায় উত্তর লিখতে? এ কী হল! বাবা যে চাইত কাশ্মীর ইঞ্জিনিয়ার হবে। এ কথা মনে পড়তেই চোয়াল শক্ত হল কাশ্মীরের। বাবার স্বপ্নপূরণ করতে হলে তাকে তো মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতেই হবে। কাশ্মীর মণ্ডলের কথায়,'অনেক কষ্টে বাবা আমাকে পড়াচ্ছিল। আমাকে নিয়ে বাবা অনেক স্বপ্ন দেখতো। সেই স্বপ্ন নষ্ট হতে দিলে চলবে না। আমাকে পড়াশুনা চালিয়ে যেতেই হবে।'
এই জেদকে সঙ্গী করে সে হাজির হয় পরীক্ষা কেন্দ্রে।
কাশ্মীরের মনোবল দেখে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ধান্যকুড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষকরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসির আলম দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তার বাড়ি এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। তিনি বলেন,'এই পরিস্থিতিতে যে ভাবে ও নিজেকে সংযত রেখে পরীক্ষা দিল তা সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।'
সর্দারপাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সুরজ মণ্ডল মুরগির গাড়ি চালাতেন। তাঁর স্ত্রী নুপুরা বিবি, ছেলে কাশ্মীর ও মেয়েকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। এই দুর্ঘনায় পরিবারের উপর বিপত্তি নেমে এল। কী করে সন্তানদের মানুষ করবেন তা নিয়ে দিশাহারা হয়ে গিয়েছেন নুপুরা বিবি।