আদিবাসীদের কাছে অসুর দেবী দুর্গার থেকেও বেশি শক্তিশালী। তাই সাধারণত আদিবাসীরা দেবী দুর্গার বন্দনা থেকে বিরত থাকেন। তবে সেই প্রাচীন রীতি ভেঙে দীর্ঘ বছর ধরে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন আদিবাসী মানুষজন। আর সংস্কৃতি মন্ত্র উচ্চারণে নয়, আদিবাসী মন্ত্রেই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। মালদার আদিবাসী অধ্যুষিত হাবিবপুর ব্লকের ভাঙাদীঘি গ্রামে এভাবে বছরের পর বছর মূর্তি তৈরি করে দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: সপ্তমী পর্যন্ত নিশ্চিতে কাটবে এই ৩ রাশির জীবন, থাকবে সুখ-সমৃদ্ধি, মিলবে সাফল্য
হাবিবপুর ব্লকের কেন্দপুকুর বাসস্ট্যান্ড থেকে খানিকটা ভিতরে অবস্থিত ছোট্ট এই গ্রামটি। যেখানে রয়েছে মাত্র ৩৫টি আদিবাসী পরিবার। দীর্ঘ বছর ধরে এই নিয়মেই দুর্গাপুজো করে আসছেন গ্রামবাসীরা। যার প্রধান উদ্যোক্তা বাবুলাল হাঁসদা। আদিবাসী রীতিতে দেবী দুর্গার আরাধনা পরিপন্থী হওয়ার পরেও যেভাবে বছরের পর বছর এই গ্রামে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে তার পিছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। বাবুলাল হাঁসদার কথায়, তার ঠাকুরদা বাংলাদেশের নাচোল থানার হাকরোল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনিই প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। দেবীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রথমে ঘট পুজো চালু করেছিলেন। বাবুলালের বাবাও ঘট পুজো করে এসেছেন। তাদের মৃত্যুর পর পুজোর দায়িত্ব কাঁধে নেন বাবুলাল।
তিনি বলেন, ‘মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে ২০০০ সাল থেকে মূর্তি রূপে পুজো করতে শুরু করি। প্রথমে এই পুজো আমাদের পরিবারের থাকলেও এখন পুরো গ্রামের পুজো হয়ে গিয়েছে। সকলেই এই পুজোতে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন। শুধু গ্রামের মানুষ জন্যই নয় আশেপাশের গ্রাম থেকেও বহু মানুষ এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন।’
শুধুমাত্র রীতি ভেঙে যে এই দুর্গাপুজো তাই নয়, এই পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণত সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করে দুর্গা পুজো করা হয়। তবে এই গ্রামে আদিবাসী ভাষাতেই পূজিত হন দেবী দুর্গা। আর সেই পুজো কোনও ব্রাহ্মণ নয় বাবুলাল হাঁসদা নিজেই করে থাকেন। দেবী দুর্গার প্রতি বাবুলালের যে ভক্তি তার প্রমাণ মিলে তার বড় মেয়ের নাম থেকেই দেবী দুর্গার নামে তার বড় মেয়ের নাম থেকেই। দেবীর নামেই বড় মেয়র নাম রেখেছেন দুর্গামনি হাঁসদা। দুর্গার বেদি দেখাশোনার দায়িত্ব রয়েছে তার কাঁধে।