পিনাকী ভট্টাচার্য
ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে সন্দেশখালি। দেড় মাস ধরে মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে ধরতে পারছে না পুলিশ। তারই মধ্যে নতুন করে সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে দ্রোহ। প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের দমাতে এবার হুমকি দেওয়ার শুরু করল পুলিশ। প্রতিবাদের সময় কোনও ভাঙচুর, মারধর বা অগ্নি সংযোগ হলে প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। প্রশ্ন উঠছে, দিনের পর দিন যখন সন্দেশখালি নির্যাতিতারা বিচার চাইতে থানায় গেলে শাহজাহান – শিবুর বাড়ির দরজা দেখাতেন পুলিশ আধিকারিকরা তখন কি ‘আইন সবার জন্য এক’ ছিল না?
আরও পড়ুন: সন্দেশখালির শাহজাহানের বিরুদ্ধে নয়া মামলা, কলকাতার আশেপাশে ৬ জায়গায় হানা ইডির
শুক্রবার সকালে তৃণমূলি গুন্ডা শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৈয়ব খানের ভেড়ির আলাঘর জ্বালিয়ে দেন বেড়মজুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকজন বাসিন্দা। এর পর গ্রামে গিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে এক গ্রামবাসীকে ধমকাতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এখানে আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এসেছি। কোনও অভিযোগ থাকলে পুলিশকে জানান। কিন্তু ভাঙচুর করলে এখনই তুলে নিয়ে যাব।
এর পর বেড়মজুর গ্রামের বাসিন্দারা ৫ জন নিরপরাধ গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এমনকী তাদের মধ্যে এক জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে বলেও দাবি গ্রামবাসীদের। এমনকী গ্রামের এক মহিলাকে প্রায় পিষে দিয়ে পুলিশের গাড়ি থানার দিকে ছোটে বলে অভিযোগ।
গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, এত অভিযোগের পর কোথায় শেখ শাহজাহান? তাঁকে গ্রেফতার না করে কোন মুখে গ্রামবাসীদের আইনের পাঠ পড়াতে এসেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকরা? আলঘর একটি অস্থায়ী কাঠামো। সেই আলাঘর জ্বালানোর অভিযোগ করে গ্রামবাসীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আর ধর্ষণ, মানুষকে মারধর, বাড়ি - জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে যে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে, তাদের মাত্র ২ জনকেই গ্রেফতার করে থেমে গিয়েছে তারা। গণধর্ষণের অভিযোগ থাকলেও শিবু আর উত্তম বাদে বাকি অভিযুক্তদের গায়ে এখনো হাত পর্যন্ত দেয়নি পুলিশ। গ্রামবাসীদের দাবি, তৃণমূল নেতাদের অবৈধ উপায়ে করা সম্পত্তি রক্ষায় মরিয়া হয়ে গ্রামবাসীদের হুমকি দিচ্ছেন স্বয়ং রাজ্য পুলিশের ডিজি।
আরও পড়ুন: সন্দেশখালির শাহজাহানের বিরুদ্ধে নয়া মামলা, কলকাতার আশেপাশে ৬ জায়গায় হানা ইডির
ওদিকে শুক্রবার গোটা বেড়মজুর ১ ও ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির পর সন্ধ্যায় সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো শুরু করেছে পুলিশ। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করলেও স্থানীয়রা যাতে প্রতিবাদ করতে না পারেন সেজন্যই এই ব্যবস্থা।