সে একটা সময় ছিল বটে। যখন কু-ঝিকঝিক শব্দ শুনে কাঁটা মিলিয়ে ঘড়িতে দম দিত পাহাড়বাসী! কিন্তু, সেসব এখন অতীত। সাতসকালের সেই জয়রাইড বন্ধ হয়েছে, অনেক দিন হল। তাই এখন আর ঘুম থেকে ওঠার পর ট্রেনের বাঁশি শুনে হাতঘড়ির কাঁটা মেলানো হয় না। বস্তুত, স্মার্টফোনের যুগে তেমনটা আর বড় একটা প্রয়োজনও হয় না।
কিন্তু, তা বলে সাত সকালে টয় ট্রেনের চাহিদা? সেটাও কি একেবারে মুছে গিয়েছে? না, মোছেনি। সত্যি বলতে কী আজ যাঁরা বয়সের ভারে প্রবীণ, পাহাড়ের সেইসব বাসিন্দা যেমন সকালের টয় ট্রেনের কু-ঝিকঝিক সেই শব্দ এখনও 'মিস' করেন, তেমনই পাহাড়ের তরুণ ব্রিগেড থেকে শুরু করে দার্জিলিঙে ঘুরতে আসা দেশ-বিদেশের পর্যটক - তাঁরাও দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, আবারও ফেরানো হোক সাতসকালের সেই টয় ট্রেন সফর।
মানুষের এই দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষও। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবারও সক্কাল-সক্কাল টয় ট্রেন চলবে পাহাড়ে। ফিরবে নস্ট্যালজিয়া। কর্তৃপক্ষের তরফে ইতিমধ্যেই সেই সংক্রান্ত ঘোষণাও করা হয়েছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ডিএইচআর-এর তরফে স্থির করা হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে জয়রাইডের সংখ্য়া আট থেকে বাড়িতে ১৩ করা হবে।
ডিএইচআর-এর ডিরেক্টর রিষভ চৌধুরী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, 'স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন যাতে সকালে টয় ট্রেন পরিষেবা ফের চালু করা হয়। বিশেষ করে বর্তমান প্রবীণ প্রজন্ম, তাঁদের যুবা বয়সে এই ট্রেন আসার শব্দ শুনেই নিজেদের ঘড়ি মেলাতেন! এই কারণেই আমরা ডিজেলচালিত অতিরিক্ত জয়রাইড পরিষেবা শুরু করতে চলেছি। দিনের প্রথম ট্রেনটি দার্জিলিং স্টেশন ছেড়ে রওনা দেবে সকালে ৭টা ১৫ মিনিটে। গন্তব্য হবে ঘুম স্টেশন।'
এই খবর শোনার পর থেকেই বারবার অতীতের দিনগুলিতে ফিরে যাচ্ছেন ডিএইচআর-এর প্রাক্তন কর্মী সারান প্রধান। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল, যখন সকালের ট্রেন পরিষেবা তাঁদের সকলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল।
সারান বলেন, 'দিনের প্রথম ট্রেন যখন প্রথম বাঁশি বাজাত, সেটা ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সকাল ৭টার অ্যালার্ম! সকাল ৭টায় এই ট্রেন কার্সিয়াং স্টেশন ছেড়ে রওনা দিত। দার্জিলিংয়ে সেই ট্রেন পৌঁছত সকাল ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ। সকালের এই ট্রেনে চড়েই পড়ুয়ারা কলেজ যেত। এই ট্রেনে চড়েই বাড়ি বাড়ি দুধ দিতে হাজির হয়ে যেতেন দুধ বিক্রেতারা। এবং যাঁরা আদালতে চাকরি করতেন, তাঁরাও এই ট্রেনই ধরতেন। এই ট্রেন পাহাড়ের সব মানুষের সময় বাঁচাত।'
ডিএইচআর-এর ডিরেক্টর রিষভ চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমানে পাহাড়ে প্রচুর পর্যটক রয়েছেন। তাঁরা সকলেই চান আরও বেশি করে জয়রাইড চালানো হোক পাহাড়ে।
চৌধুরী বলেন, 'আমরা সোমবারই (২৪ মার্চ, ২০২৫) পাঁচটি ডিজেলচালিত অতিরিক্ত জয়রাইড যুক্ত করে দিয়েছি। কিন্তু, আনুষ্ঠানিকভাবে সেই পরিষেবা চালু করা হবে আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ, ২০২৫) থেকে। পাহাড়ি পথে আরও বেশি করে ট্রেন চালানোর দাবি সবসময়েই থাকে। তাই, আমরা দু'টি ট্রেনের মধ্যেকার সময়ের ব্যবধান আরও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি তারপরও মানুষের চাহিদা বাড়ে, তাহলে ট্রেনের সংখ্য়া আরও বাড়ানো হবে।'