আবারও বেফাঁস দিলীপ ঘোষ! আর এবার তো খোদ সংঘ প্রধানের অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে বেফাঁস মন্তব্য করার অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে। তাও আবার মহাকুম্ভের উদ্দেশে রওনা দেওয়া সেই সমস্ত তীর্থযাত্রীদের নিয়ে, যাঁরা মাত্র আগের রাতেই এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হয়েছেন।
শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। মূলত কুম্ভমুখী তীর্থযাত্রীদের বেসামাল ভিড়ে ফের একবার পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, এই ঘটনার ঠিক দিন সতেরো আগে খোদ প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভের মেলাস্থলেই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। আর শনিবারের নয়াদিল্লি স্টেশনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে, রবিবার বর্ধমানের সাঁই স্টেডিয়ামের মাঠে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সভায় যোগ দেন দিলীপ ঘোষ। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন বিজেপি সাংসদকে বলতে শোনা যায়, 'আমাদের দেশে যেখানেই বড় জমায়েত হয়, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। মানুষের ধৈর্য্য কম, কোটি কোটি মানুষ বেরিয়ে পড়েছে কুম্ভ মেলার উদ্দেশে!'
এখানেই থামেননি তিনি। পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষ ও পুণ্যার্থীদেরই কাঠগড়ায় তুলে দিলীপ বলেন, 'মানুষের মধ্যে ধৈর্য খুবই কম, নিয়ম মানতে চায় না তারা। পুলিশ চাইলেও সব জায়গায় লাঠি চালাতে পারে না। কুম্ভেও ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে যাচ্ছে বহু মানুষ। কিছু অঘটন ঘটেছে, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।'
দিলীপ মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা এড়াতে হলে 'সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সর্তক হয়ে চলা উচিত।' দিলীপ এইসব মন্তব্য করবেন, আর তা নিয়ে রাজনীতির ময়দানে সমালোচনা হবে না, তা কি হয়? হয় না। এবং হয়নিও।
দিলীপের এই মন্তব্য এবং মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, 'মহাকুম্ভে কোটি কোটি মানুষ যাবে, এটা সকলের জানা। ওঁর জানা উচিত, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই খবর থাকলেও সরকার কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। নিউ দিল্লি রেল স্টেশনে ১৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র রেল দফতরের গাফিলতির কারণে।'
প্রসঙ্গত, এবারের মহাকুম্ভ মেলা ঘিরে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। ইতিমধ্যেই চারবার সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বহু তীর্থযাত্রী মেলার আয়োজনে অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ উঠেছে, ভিআইপি এন্ট্রি প্রথা নিয়েও। অনেকেরই অভিযোগ, প্রভাবশালীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে গিয়েই আমজনতার নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা হয়েছে এবং তার জেরেই কুম্ভে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এরপর শনিবার নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে ফের একই ঘটনা ঘটার পর থেকে রেল দফতর, রেল পুলিশ, দিল্লি পুলিশ - এক-এক পক্ষ এক-একরকম বয়ান দিচ্ছে। যার জেরে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। বিরোধীরা বলছেন, কুম্ভমেলা ঘিরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রশাসন যতটা প্রচার নিয়ে তৎপর হয়েছে, প্রকৃত ব্যবস্থাপনা করার বিষয়ে তারা সেই তৎপরতা দেখায়নি বলেই এত অঘটন ঘটছে।