আদালতের নির্দেশ ছিল জমি অধিগ্রহণের জন্য দাম মেটাতে হবে। কিন্তু, সেই নির্দেশ বারবার অমান্য করেছে জেলা প্রশাসন। সেই সংক্রান্ত মামলায় নজিরবিহীন নির্দেশ দিল পূর্ব বর্ধমানের জেলা ও দায়রা আদালত। অধিগ্রহণ হওয়া জমির দাম না মেটানোর জন্য পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের বাংলো বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (তৃতীয়) বিশ্বরূপ শেঠ। এই বাংলো নিলাম করেই জমির মালিকের টাকা মেটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বিচারক।
আরও পড়ুন: সাইকেল নিয়ে ছুটছেন নদিয়ার জেলাশাসক, মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, কেন এমন ভূমিকায়?
উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরের সাধনপুর এলাকায় অবস্থিত জেলা শাসকের বাংলো। সেখানে বাগান, ফাঁকা জমি ও ভবন রয়েছে। এই গোটা এলাকার বাজারদর কত তা জেলা আদালতের নাজিরকে জানতে বলেছেন বিচারক। এছাড়াও, বাজেয়াপ্ত করতে কত পুলিশ প্রয়োজন? নিলামের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে জানতে চেয়েছেন বিচারক।
বিষয়টা কি?
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ২০০৩ সালে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। পশ্চিম বর্ধমানের কাঠপুকুর মৌজার বেশ কিছু জমি সেই সময় অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে একটি জমি ছিল কলকাতার বাসিন্দা সুশান্তকুমার গোস্বামী নামে এক ব্যক্তির। অভিযোগ, সেই সময় তাঁর ০.৪১ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তার জন্য জমির মূল্য হয়েছিল ২৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৮০ টাকা। কিন্তু, সরকার সেই টাকা মেটায়নি। এনিয়ে প্রশাসনের একাধিক দফতরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সুরাহা মেলেনি। পরে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন।
২০১৩ সালে তিনি মামলা করেছিলেন। সেই সময় আদালত জমির মূল্য বাবদ মালিককে ৫৪ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সরকারকে। কিন্তু, তারপরে টাকা না মেটানোয় ২০১৫ সালে আবার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা বিচারকের দ্বারস্থ হন মামলাকারী। তবে জমির মালিক মারা যাওয়ায় উত্তরাধিকারীরা মামলাটি চালিয়ে যান। গত ১২ এপ্রিল জমির মূল্য বাবদ ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৯০ টাকা মিটিয়ে দিতে বলেছিল আদালত। কিন্তু, সেই নির্দেশও কার্যকর হয়নি। শুক্রবার আবার মামলার শুনানি হয়। তাতে সরকার আরও ২ মাস সময় চায়। কিন্তু, তাতে আপত্তি জানান মালিক পক্ষ।
আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, ২০১৫ সাল থেকে মামলাটি ঝুলে রয়েছে। আর সময় দেওয়া যাবে না। এত সময় পরেও রায় কার্যকর না হলে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন মামলাকারী। তারপরে আদালত সরকারের আবেদন খারিজ করে ৩.০৪ একর জমির উপর তৈরি জেলা শাসকের বাংলো বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার জানান, আইন অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।