বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছে। দরজা–জানালা নেই। বিশাল বাড়ি ধুলোয় মিশে গিয়েছে। এখন শুধু অস্তিত্ব হারানোর দিন গুনছে। বাড়িটি দীনবন্ধু মিত্রের। কে দীনবন্ধু মিত্র? এই প্রশ্নের উত্তর নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দিতেও পারছেন না। তবে গুগলে আছে। নীলদর্পণ–এর স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্রের বসতবাড়ির এখন এমনই হাল হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের চৌবেড়িয়া গ্রামে নাট্যকারের বাড়ির বেহাল দশা এখন চর্চার বিষয় হযে উঠেছে।
কেন এমন অবস্থা বাড়িটির? একাধিকবার আবেদন করা হয়েছিল বাড়ি সংস্কারের জন্য। কিন্তু সংস্কারে উদ্যোগ নেয়নি সরকার বলে অভিযোগ পরিবারের। পরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ, জন্মদিন–মৃত্যুদিনে নাট্যকারের মূর্তিতে একটা মালাও জোটে না। ১৮৩০ সালে চৌবেড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সামাজিক নাট্য রচনার পথিকৃৎ দীনবন্ধু মিত্র। তাঁর প্রথম নাটক নীলদর্পণ প্রকাশ হয় ১৮৬০ সালে। চৌবেড়িয়ার এই বাড়িতে বসেই নাটকের বেশ কিছু অংশ লিখেছিলেন তিনি।
হেরিটেজ ঘোষণার পর এমন অবস্থা কেন? ২০১১ সালে ২৬ মার্চ তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে। আর ২০১৬–১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের পক্ষ থেকে বাড়িটি পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু বাড়িটি সংস্কার হয়নি। এখন ধ্বংসের প্রহর গুনছে বাড়িটি। এই বাড়িটির পাশেই বসবাস করেন নাট্যকারের পরিবারের চতুর্থ পুরুষরা। ঝোপঝাড়ে ঢাকা বাড়িটি এখন বিষাক্ত সাপের আস্তানা। ধ্বংসাবশেষের সামনে নাট্যকারের একটি মূর্তি আছে। পর্যটক আসেন বাড়িটি দেখতে। সকলেই আক্ষেপ করেন। কিন্তু বাড়িটি সংস্কার হয়নি।
ঠিক কী বলছেন নাট্যকারের পরিবারের সদস্যরা? এই বিষয়ে দীনবন্ধু মিত্রের প্রপৌত্র সঞ্জিত মিত্র বলেন, ‘বাড়ি সংস্কার তো হয়নি। জন্মদিন–মৃত্যুদিনে নাট্যকারের মূর্তিতে মালা পর্যন্ত কেউ দেন না। এমনকী মহকুমা তথ্য সাংস্কৃতিক দফতরের পক্ষ থেকেও মূর্তিতে মালা দেওয়া হয় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমরা আস্থাশীল। তাঁর কাছে অনুরোধ, তিনি যেন বাড়িটি সংস্কারে উদ্যোগ নেন। দীনবন্ধু মিত্র ডাকবিভাগে চাকরি করলেও আজ পর্যন্ত দফতরের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতিতে কোনও ডাকটিকিট বের করা হয়নি।’