যেকোন সিনেমার টানটান চিত্রনাট্যকেও হার মানায় এই ছবি। শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া সংকীর্ণ রাস্তা ধরে ছুটছিল হুটার বাজানো অ্যাম্বুল্যান্স। আচমকাই বামনডাঙার রাস্তায় ব্রেক কষেন চালক। সামনে দুটি শাবক সহ হাতির দল। গজরাজের বিশাল আকৃতির দেহ। জঙ্গলঘেরা রাস্তায় নীলবাতি জ্বালানো অ্য়াম্বুল্যান্স আর হাতি একেবারে মুখোমুখি। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অ্য়াম্বুল্যান্সের ভেতর সন্তানসম্ভবা মা। যেকোনওভাবে তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছতে হবেই। কিন্তু সামনে একটু এগোলেই হয় শুড় দিয়ে ঠেলা দেবে। নয়তো পা দিয়ে পিষে দেবে। এদিকে জঙ্গলের রাস্তায় গাড়ি ঘোরাতে গেলেও একেবারে সামনে চলে আসবে হাতি।
আর দ্বিতীয়বার ভাবেননি অ্যাম্বুল্যান্স চালক। এবার শুরু হয় প্রসূতি মাকে নিয়ে ব্যাকগিয়ারে চালানো। চালক ব্যাকগিয়ারে ছোটাতে শুরু করেন অ্যাম্বুল্যান্স। এদিকে পিচ ঢালা রাস্তায় সেই পেছনদিকে চলা সেই গাড়িরও পিছু নেয় হাতি। শুঁড়ের আঘাতও লাগে গাড়ির উপর। কিন্তু নিশ্চয়যানের চালক জানেন , থামলেই সাক্ষাৎ মৃত্যু। সন্তানসম্ভবা মাকে নিয়ে ছোটাও সম্ভব নয়। প্রায় এক কিলোমিটার এভাবেই যাওয়ার পর লোকালয়ে এসে পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্স। এরপর বাসিন্দরা জোট বেঁধে হাতির পালটিকে তাড়িয়ে দেয়।
এরপর জেসিবি দিয়ে পাহারা দিয়ে প্রসূতি মাকে অ্য়াম্বুল্যান্সে চাপিয়ে সুলকাপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাতির দল তখনও রাস্তায়। পরে হাসপাতালেই সন্তান প্রসব করেন মা। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, জঙ্গলের রাস্তা দিয়েই অ্যাম্বুল্যান্স যাতায়াত করে। কিন্তু এমন ঘটনা আগে শোনা যায়নি। অ্যাম্বুল্য়ান্স চালক বাবলু সরকার বলেন,' ১২ বছর ধরে অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছি। অনেকবার হাতির মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু শুক্রবার রাতে যা হল তা জীবনে ভুলব না।কেন হল বুঝতে পারছি না। ভগবানের অশেষ কৃপা বেঁচে গিয়েছি। না হলে অ্য়াম্বুল্যান্সটাই উলটে ফেলে দিত।'