এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। একে তো করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। তার উপর হাসপাতালগুলোর মর্গে দেহের চাপ বাড়ায়, সেগুলো সংরক্ষণের জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় শ্মশানে দেহ দাহ করতে গিয়েও হোঁচট খেতে হচ্ছে পুর কর্তৃপক্ষকে। কারণ, স্থানীয়দের আপত্তির জেরে দেহ সৎকার না করেই ফিরতে হচ্ছে পুরকর্মীদের। এমনই অবস্থা হয়েছে বালুরঘাটেও।
প্রসঙ্গত, গত বছর করোনায় মৃতদের দেহ সৎকার করতে গিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল স্থানীয় প্রশাসনকে। বহু শ্মশানে করোনায় মৃতদের দেহ সৎকার করতে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বালুরঘাটেও এখন সেই একই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তিতে শহরের খিদিরপুর শ্মশানে মৃতদেহ সৎকার করতে পারছেন না পুরকর্মীরা। ফলে, দেহ দাহ না করেই ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।
এদিকে, বালুরঘাট সুপার স্পেশলিটি হাসপাতালের মর্গে জমছে করোনা রোগীর মৃতদেহ। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুকুমার দে জানিয়েছেন, বালুরঘাট হাসপাতালে মৃতদেহ সংরক্ষণে জন্য খারাপ হয়ে পড়ে থাকা ১২টি ফ্রিজার সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৪ জনের। এর মধ্যে গত ৪৮ ঘন্টায় মৃত্যু হয় ৫ জনের। গত বছর মৃতদেহ সৎকারের সমস্যা হওয়ায়, এবারে রাজ্য পুর বিষয়ক দপ্তরের তরফে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয় যে, সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিকেই দেহ সৎকারের দায়িত্ব নিতে হবে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে পুরসভা এলাকার বাসিন্দার করোনায় মৃত্যু হবে, ওই মৃতদেহের সৎকারের দায়িত্ব নেবে সংশ্লিষ্ট পুরসভা।
সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী বালুরঘাট পুরসভার তরফে খিদিরপুর শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লিতে মৃতদেহ সৎকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে কোভিড নিয়ম মেনেই সৎকার করা হবে বলে জানিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু এই উদ্যোগে এলাকার বাসিন্দারা প্রবল আপত্তি তোলায়, থমকে গিয়েছে সৎকার প্রক্রিয়া। ৪৮ ঘণ্টা পর মৃতদেহে করোনা থাকে না বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর প্রচার চালালেও মানুষকে বোঝানো যায়নি। এমনকী জেলা প্রশাসন, পুরসভা ও জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা এলাকায় গিয়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে মানুষকে বোঝালেও সমস্যার সমাধান করতে পারেননি তাঁরা।
বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যত মৃতদেহ জমে রয়েছে, তার অর্ধেকই বালুরঘাট পুর এলাকার বাসিন্দা। ফলে, শ্মশানে দেহ দাহ করতে না পারার কারণে হাসপাতালের মর্গেই মৃতদেহগুলি জমতে শুরু করেছে। সেই দেহগুলো কোথায় ও কবে সৎকার করা যাবে, তা নিয়ে আতান্তরে পড়েছে বালুরঘাটের জেলা প্রশাসন।