আমন ধানের শিসের গন্ধ জীবজন্তুদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আর তাই পুরুলিয়া এবং ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে ৬৬টি বুনো হাতি দাপট দেখাচ্ছে। দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে এই বিপুল সংখ্যক গজরাজের দল চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে এই জেলার বাসিন্দাদের। আর তাই এবার দুর্গাপুজোয় পুরুলিয়া বন বিভাগের সমস্ত কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। দুর্গাপুজোর সময় জঙ্গলমহলের এই জেলায় বড় সংখ্যায় মানুষ রাস্তায় থাকেন। তাই হাতির দল বেরিয়ে পড়লে মানুষের জীবনহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই কারণেই বনকর্মীদের ছুটি বাতিল করে তাঁদের হাতি উপদ্রুত রেঞ্জগুলিতে মোতায়েন করবে পুরুলিয়া বনবিভাগ।
ছুটি বাতিল হওয়ায় অনেকেরই মন খারাপ। কারণ তাঁরা বাড়িতে কথা দিয়েছিলেন পঞ্চমীর রাতে ফিরবেন। কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়াল তাতে বিজয়া দশমীর আগে আর ঘরে ফেরা হচ্ছে না। হাতি উপদ্রুত রেঞ্জগুলিতে দুটি করে টিম রাখা থাকবে। কুইক রেসপন্স টিম এবং র্যাপিড রেসপন্স টিম। এই রেঞ্জগুলিতে থাকবে একটি করে ফ্লাইং স্কোয়াড। লোকালয়ে হাতি আসার খবর মিললেই তাঁরা পৌঁছে যাবে। এই বিষয়ে পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, ‘দুর্গাপুজোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমাদের দায়িত্ব পালনই একরকম উৎসব। কাজের মধ্য দিয়ে আনন্দ মেলে। দুর্গাপুজোর সময় সমস্ত কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দুর্গাপুজোয় যাতে পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষজন পাহাড়–জঙ্গল এলাকায় ঠাকুর দেখতে পারেন তার জন্য আমরা ব্যবস্থা করেছি।’
আরও পড়ুন: অনশন আন্দোলনে অনুপস্থিত আরজি কর হাসপাতালের ডাক্তাররাই, তাহলে কি বিভাজন শুরু?
মানুষজন বিপদে পড়লে অথবা লোকালয়ে হাতির দল দেখতে পেলে যাতে দ্রুত খবর দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বনবিভাগে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের দুটি নম্বর—৭০০৩৬৩৪১৩০ ও ৮০০১৯৪৫৫৯৭। কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়া বনবিভাগ দুর্গাপুজোর সময় ‘পাহারাদার’ হয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেন বনকর্মীরা। যাতে বুনো হাতির দল লোকালয়ে ঢুকতে না পারে। আর এবারও বনদফতর একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুরুলিয়ায় হাতির হামলায় ক্ষয়ক্ষতি দু’বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। এই জেলা ও ঝাড়খণ্ড সীমানা মিলিয়ে ৬৬টি হাতি আছে। ওই হাতির দল কোনও বড় ক্ষতি না করলেও সবজি এবং আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতি করেছে ব্যাপক হারে।
অক্টোবর মাস থেকে গোটা শীত পর্যন্ত হাতিদের ক্ষিদে বেশি পায়। আর খাবার খুঁজতে খুঁজতে বনভূমি ছাড়িয়ে লোকালয়ে চলে আসে তারা। তখনই গোলমাল দেখা দেয়। বন দফতর সূত্রে খবর, মাঠা, পানরা, বড়চাটারমা এবং ঝাড়খণ্ড সীমানায় একটি হাতি, মাঠার কুদনা মৌজায় ১টি, বলরামপুর রেঞ্জের কেরোয়া মৌজায় ১টি, ঝালদা রেঞ্জের কুদাগাড়া মৌজায় ১টি, চককেরিয়ারি লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমানায় ৩৪–৩৫টি হাতি। বাঘমুন্ডি রেঞ্জের কালিমাটি এবং ঝাড়খণ্ড সীমানায় রয়েছে ২৬টি হাতি। তবে অযোধ্যা রেঞ্জের পিটিডিরি মৌজায় হাতি রয়েছে ১টি। সুতরাং দুর্গাপুজোর সময় জঙ্গল থেকে হাতির দল বেরিয়ে লোকালয়ে আসতে পারে। এখন সেটাই ভয়ের।