মন খারাপ মিরিটির। সমস্ত প্রথা মেনে পুজো হচ্ছে। রয়েছে ঢাকের বাদ্যিও। তবু টের পাওয়া যাচ্ছে যে তিনি নেই। প্রতি বছর তাঁর চণ্ডীপাঠেই মুখর হয়ে উঠত বীরভূম কীর্ণাহারের পাশে মিরাটি গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ি। কিন্তু এবার সেই বাড়ি ভারাক্রান্ত। কারণ গ্রামের পল্টু আর নেই। এ বছর ৩১ অগস্ট দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর প্রয়াত হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রপতি হন বা বিদেশমন্ত্রী, প্রতি বছরই নিয়ম করে গ্রামে আসতেন প্রণববাবু। বছরের পর বছর নিজেই করে এসেছেন চণ্ডীপাঠ। একটা সময়ের পর পুরোটাই তাঁর মুখস্থ হয় যায়, জানিয়েছেন ওই পুজোর প্রধান পুরোহিত। নবপত্রিকা স্নান–সহ বিভিন্ন রীতিনীতি নিজে হাতে পালন করতেন। সেই পুজোয় আজ তিনি নেই। এ বছর চণ্ডীপাঠ করবেন পুরোহিত। অসৌচ চলছে বলে কোনও কিছুতেই অংশ নিতে পারবেন না প্রণবপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
ভারাক্রান্ত মনে অভিজিৎবাবু বলছিলেন, ‘এই প্রথম কর্তাহীন, প্রণবহীন দুর্গাপুজো। আমি জন্মের পর থেকে কয়েকবার ছাড়া তাঁকেই এই পুজো করে আসতে দেখেছি। শুধু কয়েকবার সরকারি কাজের জেরে এবং ১৯৭৮ সালের বন্যায় তিনি আসতে পারেননি মিরিটিতে। সে বার ঘটপুজো হয়েছিল। তার পর থেকে আমরা বাপ–ব্যাটা কখনওই পুজো থেকে দূরে সরে থাকিনি।’
প্রণববাবু না থাকলেও এবারও কোনও প্রথাই বাদ যাচ্ছে না বলে জানালেন ছেলে অভিজিৎ। এই পুজোর অন্যতম ঐতিহ্য, কোনও ব্যক্তি পুজোর দিনগুলি মুখোপাধ্যায় বাড়িতে এলে কাউকে ভোগ না খাইয়ে পাঠানো হত না। সেই একই প্রথা এখনও চালু রয়েছে। অভিজিৎবাবু বলছিলেন, ‘তবে এবার করোনা পরিস্থিতির জেরে লোকজন এবার কম আসবেন। তাও সবরকম বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। যেমনভাবে প্রতি বছর পুজো হয়, এবারও সেভাবেই হবে। কোনও কমতি থাকবে না।’