খাল, বিল, নালা সংস্কার করার জন্য অভিনব উদ্যোগ। সৌজন্যে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তাঁর পরামর্শেই খাল সংস্কারের জন্য মাটি কাটার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এক নয়া মডেল চালু করা হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে - পূর্ব মেদিনীপুরে খাল-বিল সংস্কার নয়া মডেল!
কী এই নয়া মডেল?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এক্ষেত্রে খাল, বিল, নালা সংস্কারের জন্য সরকারি নিয়ম অনুসারেই টেন্ডার ডাকা হবে। কিন্তু, যে ঠিকাদার সংস্থা সেই কাজের বরাত পাবে, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে এক টাকাও দেওয়া হবে না!
এর বদলে ওই ঠিকাদার সংস্থা পাবে সংস্কারের কাজ চলাকালীন খাল, বিল থেকে তোলা বিপুল পরিমাণ মাটি! আর কথাতেই আছে, 'টাকা মাটি, মাটি টাকা'! এই নয়া মডেলেও সেই তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক। টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদার সংস্থা খাল, বিল থেকে কেটে তোলা মাটি অধিকাংশটাই নিয়ে নেবে এবং তা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করবে।
অন্যদিকে, এই মাটির একটি সামান্য অংশ টেন্ডার দেওয়া সরকারি দফতর বা বিভাগকেও দিতে হবে। ফলে, ওই সরকারি দফতরকে মাটি কাটানোর জন্য বা খাল, বিল সংস্কারের জন্য একটি পয়সাও খরচ করতে হবে না। উলটে যে পরিমাণ মাটি তারা পাবে, সেটা বিক্রি করে দফতরের ভালো মতো রোজগার হবে। যা অন্য়ান্য উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যাবে।
এক্ষেত্রে টেন্ডার ডাকার পর যে ঠিকাদার সংস্থা সবথেকে বেশি পরিমাণ মাটির তোলার প্রস্তাব দেবে, টেন্ডার তাদেরই দেওয়া হবে। আপাতত পূর্ব মেদিনীপুরে পরীক্ষামূলকভাবে টেন্ডারের এই নয়া মডেল চালু করা হয়েছে। এই পরীক্ষা সফল হলে তা রাজ্য়ের অন্য়ান্য জায়গাতেও প্রয়োগ করা হবে।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ বলছেন, এ এক অভূতপূর্ব ভাবনা। এ রাজ্যে খাল, বিল মজে সমস্য়া কম হয় না। কিন্তু, অর্থের অভাবে অধিকাংশ সময়েই সংস্কারের কাজ আটকে থাকে। কিন্তু, এক্ষেত্রে সেই সমস্য়ার সমাধান কোনও টাকা খরচ না করেই করে ফেলা যাবে।
আপাতত পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এমন মোট ১৩টি খাল চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলি দ্রুত সংস্কার করা দরকার। ইতিমধ্য়ে তমলুকের পায়রাটুঙ্গি খালটি সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। মাটি কাটার কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।
এই খাল সংস্কার করার জন্য একটি সংস্থা প্রায় ৩০ লক্ষ ঘনফুট পলিমাটি তোলার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, এই কাজের জন্য সেচ দফতরকে প্রায় ১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হত। কিন্তু, নয়া মডেল অনুসারে কাজ হলে এক টাকাও খরচ হবে না।
এক্ষেত্রে জেলা পরিষদই টেন্ডার ডাকে। শর্ত ছিল, ৫ লক্ষ ঘনফুট পলি জেলা প্রশাসনকে দিয়ে দিতে হবে। বাকি ২৫ ঘনফুট মাটি টেন্ডারপ্রাপ্ত সংস্থা পাবে। সেটা তারা বিক্রি করতে পারবে এবং সেখান থেকেই তাদের বিপুল আয় হবে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসন ৫ লক্ষ ঘনফুট পলি বিক্রি করে সেই টাকা কোষাগারে তুলতে পারবে।