রুখা-শুখা কয়লা খনি এলাকাগুলিকেই সাজিয়ে গুছিয়ে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়াস শুরু হল এই বাংলায়। প্রাথমিকভাবে পশ্চিম বর্ধমানের ঝাঁঝরা কোলিয়ারি এলাকায় এই ধরনের একটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করেছে ইসিএল (ইস্টার্ন কোল ফিল্ড) কর্তৃপক্ষ। সেখানে তৈরি হচ্ছে ইকো পার্ক।
এই সময়-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, অন্য়ান্য পর্যটনকেন্দ্রের মতোই এখানেও সৌন্দর্যায়ন ঘটানো হবে। থাকবে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের নানা ব্যবস্থা। তবে, সবথেকে আকর্ষণীয় যে বিষয়টি হতে চলেছে, তা হল - পর্যটকরা একটি মডেল খনির ভিতর ঢুকে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি-সহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে পারবেন। যদিও এই সমস্ত পরিকল্পনার সবটা বাস্তবায়িত হতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে।
সূত্রের খবর, কয়লা খনি অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত ৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে কয়লা মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময়েই এই বিষয়টি উত্থাপন করেন মোদী। তাঁর মতে, এই ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। তাই পুরোটা খতিয়ে দেখা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এই প্রস্তাব দেওয়ার পরই এ নিয়ে তৎপর হয় কোল ইন্ডিয়া। ইসিএল, বিসিসিএল (ভারত কোকিং কোল লিমিটেড)-সহ দেশের সমস্ত খনি অঞ্চলের কর্তৃপক্ষকেই পুরো বিষয়টি জানিয়ে কয়লা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়।
সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট খনি এলাকার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ তাদের এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ার বিষয়ে কী ভাবছে, তা একটি প্রস্তাব আকারে জমা দিতে হবে। সেই কাজ সারতে হবে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে। তারপর সমস্ত প্রস্তাব খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কয়লা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এই ভাবনা বাস্তবায়িত হলে তা থেকে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পোল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে এই ধরনের পর্যটনকেন্দ্র আছে। সেগুলি যেমন জনপ্রিয়, তেমনই বাণিজ্যিকভাবে সফল।
এখানেও সেই ধাঁচে কাজ করা যেতে পারে। খনি তৈরি করার সময় প্রচুর পরিমাণে মাটি, পাথর কেটে গর্ত করা হয়। সেইসব সামগ্রী পাশেই টিলার মতো ঢিবি করে রাখা হয়। ফলে সেখানকার ভূপ্রকৃতি বদলে গিয়ে রুখা, শুখা পার্বত্য এলাকার মতো দেখতে লাগে।
সংশ্লিষ্ট মহলের প্রস্তাব, এই শুকনো এলাকায় পরিকল্পনা মাফিক সবুজায়ন ঘটাতে পারলে একদিকে যেমন পরিবেশরক্ষা করা যাবে, তেমনই মানুষ এমন জায়গায় ঘুরতে আসতেও চাইবে। এছাড়া, খোলামুখ খনিগুলি জল জমে যে জলাধার সৃষ্টি হয়, সেখানে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। সেইসঙ্গে, আশপাশে রেস্তোরাঁ, পর্যটকদের থাকার ছোট ছোট জায়গা গড়ে তোলা যেতে পারে।
তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে একাধিক নতুন নাম জুড়বে। কারণ, এই রাজ্য়ে এমন খনি অঞ্চল বহু আছে।