উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে গোরুমারা ন্যাশনাল পার্ক। বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে ফের চালু হল বহুল প্রতীক্ষিত হাতি সাফারি। যদিও আপাতত সুযোগ মিলছে শুধুমাত্র অনলাইন বুকিং করা পর্যটকদের জন্যই, জানিয়েছেন গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন। বিপর্যয়ের পর পুনরায় এই সাফারি চালু পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে বিপর্যস্ত কৃষকদের শস্য বিমা নিশ্চিত করতে হবে, নির্দেশ কৃষিমন্ত্রীর
অন্যদিকে, জলদাপাড়া সাফারি এখনও বন্ধ। বন্যার জেরে ভেঙে গেছে অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রাস্তা ও কাঠের সেতু। সেগুলি মেরামতির কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভির কথায়, সেতু ও পথ মেরামতি শেষ হলেই জলদাপাড়াতেও হাতি সাফারি চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তবে চ্যালেঞ্জ এখানেই শেষ নয়। বিপর্যয়ের পর জঙ্গলের প্রকৃত ক্ষতির মূল্যায়নে বনদফতর বর্তমানে ব্যাপক স্ক্যানিং করছে। গোরুমারাতেই প্রায় ২০টি কুনকি হাতিকে লাগানো হয়েছে জঙ্গল পরিদর্শনে। সেই কারণেই পর্যটকদের জন্য বর্তমানে মাত্র দুটি কুনকি ‘জেনি’ ও ‘মাধুরি’ সাফারিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে দিনে সীমিতসংখ্যক পর্যটক প্রায় ১২ জনের বেশি এলিফ্যান্ট রাইডের সুযোগ পাচ্ছেন না। সকাল ও বিকেলে মিলিয়ে মাত্র তিনটি ট্রিপ চালানো সম্ভব হচ্ছে, প্রতি ট্রিপে শুধুমাত্র দুইজন করে পর্যটক।
যাঁরা অফলাইনে বুকিং করতে ধূপঝোড়া এলিফ্যান্ট ক্যাম্পে আসছেন, তাঁদেরকেও ফিরতে হচ্ছে নিরাশ হয়ে। কারণ এখনও অফলাইন বুকিং চালু হয়নি। তবুও পর্যটকদের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে, যা গোরুমারার প্রতি মানুষের আকর্ষণ আবারও প্রমাণ করছে। জঙ্গলের ভেতরে ক্ষতি তুলনামূলক কম হলেও জিরো বাঁধের কাছে নজরমিনার ভেঙে পড়েছে জলের তোড়ে। ওই ওয়াচ টাওয়ারটি বনকর্মীদের টহলদারি ও নজরদারির অন্যতম কেন্দ্র ছিল। এর ফলে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণে কিছু অসুবিধা হচ্ছে বলে দফতর জানিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে খাদ্যঘাটতিতে। বর্ষার আগে গোরুমারা, জলদাপাড়া, বক্সা সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ঘাস রোপণ করা হয়েছিল হাতি ও গণ্ডারদের খাদ্যের জন্য। কিন্তু বন্যায় তার মধ্যে ৩০০ হেক্টরের বেশি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট জমিতেও পাহাড়ি জলের সঙ্গে ভেসে আসা ডলোমাইটের স্তর পড়েছে, যা তৃণভোজী প্রাণীরা আর খাবে না। ফলে খাদ্যের সন্ধানে হাতি-গণ্ডারদের লোকালয়ে ঢোকার সম্ভাবনা বাড়ছে, যা মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণ সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ডিএফও জানান, ইতিমধ্যেই গোরুমারা ও জলপাইগুড়ি ডিভিশন মিলিয়ে প্রায় দেড়শো বনকর্মী মোতায়েন রয়েছে। এরমধ্যে ৩০ জন সশস্ত্র রক্ষী। বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকলেই দ্রুত সাড়া দিতে ২৪টি গাড়ি রাখা হয়েছে বিভিন্ন স্পটে। এখন পর্যন্ত ১১টি এলাকায় হাতির দল, তিনটি এলাকায় গণ্ডার এবং চারটি এলাকায় বাইসনের দলকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জানা যাচ্ছে, বন্যায় দুইটি গণ্ডার ও আটটি বাইসনের মৃত্যু, পাশাপাশি ১৪টি হরিণ ভেসে যাওয়ার ঘটনা বন কর্তৃপক্ষকে বিপর্যস্ত করেছে। মেচি নদী থেকে উদ্ধার হওয়া ১৫ দিনের একটি হস্তিশাবককে বর্তমানে হলং পিলখানায় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে।