লটারি কাণ্ডে শুধু অনুব্রত মণ্ডলের নাম নেই। এই কাণ্ডে প্রভাবশালী বলে পরিচিত প্রায় ১২ জন গত কয়েক বছরে নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির লটারি জিতেছেন একাধিকবার। তাঁদের সবারই লটারিতে পাওয়া টাকার অঙ্ক এক কোটির নীচে। তাই তাঁদের ছবি–সহ বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়নি। এই প্রভাবশালীদের সঙ্গে রাজনীতির সংস্রব রয়েছে। এমনকী তাঁদের বিরুদ্ধেও বেআইনিভাবে কয়লা, গরু এবং বালি পাচারের অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছে ইডি। এবার এই প্রভাবশালীদের ব্যাঙ্কের নথি পরীক্ষার কাজ চলছে।
ঠিক কী জানতে পেরেছে ইডি? গরুপাচার মামলার তদন্তে নেমে ইডির অফিসাররা জানতে পারেন, নির্দিষ্ট একটি লটারি কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। আর অনুব্রত ও তাঁর কন্যার পাঁচবার লটারি জেতেন। তিহার জেলে বন্দি এনামুল হকও লটারি জিতেছেন। এইসব ঘটনা থেকেই স্পষ্ট, নির্দিষ্ট লটারি কোম্পানিকে ব্যবহার করে কালো টাকাকে সাদা হয়েছে। লটারির পুরষ্কার মূল্যের আসল প্রাপকের কাছ থেকে জোর করে টিকিট নিয়ে সেই নম্বর পঠিয়ে দেওয়া হতো ওই সংস্থার উচ্চ পদাধিকারীদের কাছে। এই বিষয়ে তথ্য পেতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় ওই লটারি সংস্থার এক কর্মীকে। ইডি সূত্রে খবর, তিনিই সমস্ত তথ্য দিয়েছেন।
আর কী জানা যাচ্ছে? এই রাজ্যের বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন সময় বারবার লটারি জিতেছেন। বীরভূম–সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ জেতা টিকিট দিয়েছেন নিজের আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠদের। আর কালো টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আসল প্রাপকের কাছে। আর পুরস্কারের টাকা জমা পড়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে। এই টাকার অঙ্ক ৩০ থেকে ৪০ লক্ষের মধ্যে। বারবার তাঁরা এই অঙ্কের লটারি জিতেছেন। এতে দু’ভাবে লাভবান তাঁরা। এক, কোটি টাকার লটারি না মেলায় ছবি–সহ বিজ্ঞাপনে নামও বেরয়নি। দুই, বারবার লটারি জেতায় বিপুল পরিমাণ কালো টাকাকে সাদা করা সম্ভব হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
ইডি কী জানতে পারছে? ইডি বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছে, ৩০ থেকে ৪০ লক্ষের মধ্যে লটারি জিতেছেন যাঁরা তাঁদের খোঁজ করতেন প্রভাবশালীরা। এই খোঁজ মেলার পর তাঁদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হতো নগদের থলি। ওই টাকা দিয়ে টিকিট নিয়ে নেওয়া হতো। আর টিকিটের নম্বর লটারি সংস্থার আধিকারিকদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন প্রভাবশালীরা। এভাবেই কালো টাকাকে সাদা করেছেন তাঁরা।