একে লকডাউনের জেরে রোজগার বন্ধ, তার উপর ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ভিটেমাটি হারিয়ে আক্ষরিক অর্থেই পথে বসেছেন সুন্দবনের ঘোড়ামারা দ্বীপের নিঃসহায় বাসিন্দারা।
করোনা সংক্রমণের জেরে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার পরেও কলকাতার খিদিরপুরে নিজের আস্তানা ছাড়ার কথা ভাবেননি বছর পঞ্চাশের আবদুল রউফ। কিন্তু মহল্লায় এক মহিলা করোনা পজিটিভ দেখা দেওয়ার পরে ঝুঁকি না নিয়ে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কপাল এমনই যে, ফিরে আসতেই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ছারখার হয়ে গিয়েছে ঘোড়ামারা দ্বীপে তাঁদের গ্রাম। তছনছ হয়ে গিয়েছে তাঁর কাঁচাবাড়ি।
রোজগারের ধান্দায় আবদুলের মতো তাঁর তিন ছেলেও বেশ কয়েক বছর হল গ্রামছাড়া। ভিনরাজ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তাঁরাও পড়েন লকডাউনের খপ্পরে। কোনও রকমে রাজ্যে ফিরে ঘোড়ামারায় পৌঁছেছেন তিন জনে কিছু দিন আগে। কিন্তু দুর্যোগের কবলে পড়ে গোটা পরিবারই এখন আশ্রয় শিবিরে মাথা গুঁজতে বাধ্য হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণতম প্রান্তে একরত্তি দ্বীপ ঘোড়ামারায় প্রতি বছরই নদীর ভাঙনে তলিয়ে যায় জমি-জিরেত-ঘরবাড়ি। বাসিন্দারা প্রায় প্রতি বছরই দ্বীপের আরও ভিতরের দিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হন বসতবাড়ি। কিন্তু তাতেও রক্ষা মেলে না। চোখের সামনে নদীগর্ভে তলিয়ে যায় একরের পর একর আবাদি জমি। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে জমিহারা প্রতিবেশীর থেকে জমি কিনে ফের বসত স্থাপন করেন। সত্তরের দশকে যে দ্বীপভূমির আয়তন ছিল ৯ বর্গ কিমি, তা বর্তমানে কেটেছেঁটে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪.৮ বর্গ কিমি-তে। ৭,০০০ বাসিন্দার মধ্যে দ্বীপে রয়ে গিয়েছেন ৫,০০০। রাজ্যের ক্ষুদ্রতম ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতে রয়েছেন মাত্র ৫ জন সদস্য।
তবু এতদিনে এ সবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে ঘোড়ামারা। কিন্তু এবারের ঘূর্ণিঝড় তাদের সর্বস্বান্ত করে ছেড়েছে। লকডাউনে কেরালা থেকে ঘরেফেরা শ্রমিক চন্দন চৌধুরী বলেন, ‘ঘোড়ামারায় এখন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা আমরা জনাকুড়ি পরিবার রয়েছি। অতিমারির ভয়ে ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরলাম। এখন আমফানের হানায় ফের আমরা ভিটেছাড়া হয়েছি।’
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পরে দ্বীপবাসীদের আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যায় প্রশাসন। ঝড় চলে যাওয়ার পরে গত রবিবার তাঁদের কেউ কেউ ঘোড়ামারায় ফিরেছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে রসদ জোগাড় করে আবার ঘর বাঁধার চেষ্টায় নেমেছেন হতভাগ্য বাসিন্দারা।
একদা তিনটি মৌজায় বিভক্ত ঘোড়ামারার লোহাচূড়া মৌজা সম্পূর্ণ তলিয়ে গিয়েছে। ভাঙনে হারিয়ে গিয়েছে গ্রামের গর্ব তিনতলা ডাকঘরও।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধিকর্তা তুহিন ঘোষ বলেন, ‘মূলত নদীর ভাঙনেই ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ঘোড়ামারা দ্বীপ। অনেকে যুক্তি দেখান, এর জন্য সমুদ্রের জনস্তর বাড়াই কারণ। কিন্তু তেমন হলে নয়াচর এলাকার অন্যান্য দ্বীপেরও একই দশা হত। যে কারণই থাক, এই সমস্ত পরিবেশ শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ এখন ঘোরতর অনিশ্চিত।’
পশ্চিমবঙ্গের ত্রাণ তহবিলে দান করুন-
WEST BENGAL STATE EMERGENCY RELIEF FUND
(Part of Chief Minister Relief Fund)
https://wbserf.wb.gov.in/wbserf
A/C No: 628005501339
Bank: ICICI Bank
Branch: Howrah
IFSC Code: ICIC0006280
MICR Code: 700229010
SWIFT Code: ICICINBBCTS