‘দিদিকে বলো’র ধাঁচে আবারও তৃণমূল কংগ্রেসের অভিনব প্রচার কর্মসূচি ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ১৫টি জনমুখী প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের ২ কোটি পরিবারের দোরগোড়ায় হাজির হতে চলেছেন সাড়ে তিন লক্ষ ‘দিদির দূত’। তাঁরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি। শুনবেন মানুষের অভাব–অভিযোগ, চাওয়া এবং না পাওয়ার কথা। গ্রাম থেকে শহর— সর্বত্র মানুষের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তুলতে ইংরেজি নতুন বছরের শুরু থেকেই ঝাঁপাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে রাজ্যের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি। দিদির দূত সেই চিঠি নিয়ে যাবে।
কি লেখা আছে সেই চিঠিতে? ১ জানুয়ারি ২৫ বছর পূর্ণ করেছে তৃণমূল। জনস্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ২ জানুয়ারি থেকে নতুন পথে হাঁটতে শুরু করল রাজ্যের শাসক দল। আর এই পথেও লক্ষ্য একটাই ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে বাংলার সব মানুষের জন্য উন্নয়ন। তাই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘২০১১ সালে আপনি যখন এই রাজ্যের উন্নতি এবং সমৃদ্ধির মহান দায়িত্ব আমার কাঁধে অর্পণ করেছিলেন তখন এই রাজ্য সামাজিক–অর্থনৈতিকভাবে ছিল বিধ্বস্ত। এই রাজ্য হয়ে উঠেছিল নিঃস্ব এবং চরম নৈরাশ্য। তারপর থেকে সেই গুরুদায়িত্ব যথার্থভাবে এবং নিষ্ঠা সহকারে পালন করার জন্য আমি নিত্যদিন চেষ্টা করেছি। প্রতিটি মুহূর্ত এই স্বপ্ন দেখে এগিয়ে চলেছি যে, রাজ্যের প্রতিটি অংশের মানুষ যেন নিরাপদে, সুস্থভাবে এবং আনন্দে জীবনযাপন করতে পারে।’
ঠিক কী উল্লেখ করেছেন চিঠিতে? লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষক বন্ধু, সামাজিক সুরক্ষা যোজনা, বিধবা ভাতা, কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, বাংলার আবাস যোজনা, নিজ গৃহ নিজ ভূমি–সহ একাধিক প্রকল্পের বিষয় মানুষের কাছে তুলে ধরবেন তৃণমূল কর্মীরা। এই কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে দলীয় নেতৃত্ব গ্রাম পঞ্চায়েত, পুর এলাকায় গিয়ে দিন কাটাবেন। দলীয় কর্মীর বাড়িতে নৈশভোজ এবং রাত্রিযাপন করবেন তাঁরা। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলার জন্য আমি যে স্বপ্ন বুনেছিলাম, সেই স্বপ্নই আমাকে এমন কিছু প্রকল্প আনতে অনুপ্রানিত করেছে যাতে আপনার জীবনের প্রতি পদক্ষেপ যেন সুরক্ষা বেষ্টনীতে আবৃত থাকে। আমি শিক্ষা থেকে চাকরি, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে আবাসন এবং খাদ্য থেকে সামাজিক সুরক্ষা—এই সবকটি ক্ষেত্রেই এমন কিছু প্রকল্প তৈরি করেছি যা আপনার জীবনকে একটি সামগ্রিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখবে, তা হলো আমার সুরক্ষা কবচ। এই সুরক্ষা কবচ বাংলার সকল বাসিন্দাকে নিরাপদ রাখার জন্য আমার প্রচেষ্টার একটি স্বীকৃতি এবং উন্নয়নের অগ্রগতির সাক্ষ্য।’
আর কী লিখেছেন নেত্রী চিঠিতে? সোমবার নজরুল মঞ্চ থেকে মমতার নির্দেশ, ‘ধৈর্য সহকারে সাধারণ মানুষের কথা শুনবেন। আর মানুষের বাড়িতে এলাহি ভোজ নয়। ডিম–ভাত, কুচো মাছ হলেই হবে। আমিও যাব এই কর্মসূচিতে।’ মমতা বন্দোপাধ্যায় চিঠিতে লিখেছেন, ‘আপনি এবং আপনার পরিবার আমার সুরক্ষা কবচের আওতায় যে সদা সুরক্ষিত আছেন তা নিশ্চিত করার জন্য আমি আমার বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসাবে আমার দূত আপনার বাড়িতে প্রেরণ করছি। আমি অনুরোধ করছি, আপনি তাঁকে/তাঁদেরকে আপনার বহু মূল্যবান সময় দিয়ে সাহায্য করবেন। যদি আপনার কোনও প্রশ্ন, কোনও অভাব–অভিযোগ বা কোনওরকম সমস্যা থাকে তবে তা অনুগ্রহ করে আমার দূতকে জানিয়ে দেবেন। আমি পূর্ণ আশ্বাস দিচ্ছি যে, আপনার সমস্ত অভাব–অভিযোগ আমি ব্যক্তিগত স্তরে শুনব এবং সমাধান করব।’