এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে নিজেদের ‘করুণ দুর্দশা’ নিয়ে চিঠি লিখলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ অধ্যাপকেরা। দিনের পর দিন তাঁদের কীভাবে অপমানিত, লাঞ্ছিত এমনকী আক্রান্তও হতে হচ্ছে, তার বিশদ বিবরণ ওই চিঠিতে লিখেছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্যকে সমস্ত ঘটনার কথা উল্লেখ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও অনুরোধ করেছেন তাঁরা।
বিশ্বভারতীর বাতাবরণ কীভাবে দিনের পর দিন কলুষিত হচ্ছে, তাও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ‘নির্যাতিত’ অধ্যাপকেরা। এমনকী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই তাঁদের বন্ধক বানিয়ে আন্দোলনকে পায়ের তলায় পিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ অধ্যাপকদের।
তাঁদের অভিযোগ, বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য আগের মতো আর নেই। তাঁরা ওই চিঠিতে আরও লিখেছেন, এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে তাঁরা অনেকবার পরামর্শ করেছেন। তার সত্ত্বেও কেউ কাউকে কোনও সাহায্য করতে পারছেন না। বিশ্বভারতীর প্রতীক চিহ্ন দেওয়া ওই চিঠিতে তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁদের সকলের একটি অংশ। গৌরবময় এই প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতাকে দূষিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বভারতীর সামগ্রিক পরিবেশ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।
বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের আরও অভিযোগ, কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসের মধ্যে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোয় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও রাজনীতি করছেন। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্বভারতীতে একটি নয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে দেখছি। যেখানে সিনিয়ররা পড়ুয়াদের সঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। যেখানে তারাও প্রতিষ্ঠানের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করে তাঁদের অপমানিত করছেন।’
গত ২৪ মার্চের বিশ্বভারতীর সহ-উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নালিশ করেন যে তাঁকে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল একটি অডিয়ো বার্তায় হুমকি দিয়েছেন। তিনি ওই চিঠিতে জানিয়েছেন, ভোটের পর অনুব্রত তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অনুব্রত তাঁকে হুমকি দিয়ে নাকি বলেছেন, তিনি এমন শিক্ষা দেবেন, সারাজীবন তা ভুলতে পারবেন তিনি। সেই ঘটনার জেরে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠান বিশ্বভারতীর উপাচার্য। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
তারপরেই বিদ্যুতের স্বপক্ষে পড়ুয়া ও অধ্যাপকেরা এই নিয়ে বিক্ষোভও দেখান। অবশ্য বিশ্বভারতীর মুখপাত্র এই চিঠি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু একাংশ অধ্যাপকেরা এই চিঠি নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। বুফার সঙ্গে যুক্ত এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, এই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক ১৭৫ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি প্রেস বিবৃতি জারি করেন। অবশ্য এই স্বল্প সংখ্যার স্বাক্ষরপত্রে কতটা উপকার হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, এতে হাতেগোনা কয়েকজন অধ্যাপক—প্রশাসনিক আধিকারিক ছাড়া বাকি সবকটি স্বাক্ষরই অশিক্ষক কর্মীদের। অথচ বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবারই জানা রযেছে।
ওই অধ্যাপক আরও জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোদী শতবর্ষ উদযাপনকে সম্বোধন করেছিলেন, সেদিন বুফার তরফ থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করা একটি স্বাক্ষরপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায় ছ’ঘণ্টা আটকে রেখেছিল।