এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছিলেন মা। বাবা গিয়েছিলেন রোজের মতোই তাঁর কাজের জায়গায়, স্থানীয় একটি মুদির দোকানে। এই অবস্থায় বাড়িতে একাই ছিল ১৭ বছরের কিশোর। সোমবার থেকে তারও মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তার আগেই সব শেষ। শনিবার রাতে যখন ওই কিশোরের মা প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ফেরেন, তিনি দেখেন - তাঁরই শাড়ির ফাঁস গলায় দিয়ে ঘরের মধ্যে ঝুলছে একমাত্র সন্তানের নিথর দেহ!
শনিবার রাতে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে মুর্শিদাবাদের কান্দির বড়ঞা থানা এলাকার ডাকবাংলো গ্রামে। যে কিশোরের ঝুলন্ত দেহের কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তার নাম মৃণাল পান। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সে আত্মঘাতী হয়েছে। পরিবারের দাবি, পরীক্ষায় বসার ভয় এবং ফের একবার অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা আর আতঙ্কেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছে সে! যদিও পুলিশ এই তত্ত্ব খতিয়ে দেখছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ১৭ বছরের মৃণাল স্থানীয় নিমা বাহাদুরপুর হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। সে ছিল তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা মনোহর পান এলাকারই একটি মুদিখানার দোকানে কাজ করেন। মৃণালের মা গৃহবধূ।
তাঁরা জানিয়েছেন, গতবছরও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল মৃণাল। কিন্তু, সেবার সে পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। ফলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল ওই কিশোর। পরীক্ষার নাম শুনলেই ভয় পেত।
কিন্তু, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা - সবাই তাকে বোঝান। তাঁরা বোঝান, একবার পরীক্ষায় ফেল করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। তাই, গতবারের ফলাফল ভুলে মৃণালের আবার মাধ্যমিকে বসা উচিত। এতে কাজ হয়। মৃণাল ফের পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
কিন্তু, সপ্তাহ খানেক আগে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড পাওয়ার পর থেকেই আচরণ বদলে যায় তার! আবারও সেই পরীক্ষার আতঙ্ক, পাশ করতে না পারার আশঙ্কা! পরিবারের দাবি, সারাক্ষণই নাকি ভয়ে ভয়ে থাকত মৃণাল।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার রাতে মৃণালের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হলে সন্তান শোকে পাথর হয়ে যান মৃণালের বাবা-মা। তাঁরা কল্পনাও করতে পারেনি যে এমন কিছু ঘটতে চলেছে। তাঁদের দাবি, পরীক্ষার জন্য প্রবল মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছে মৃণাল।
প্রাথমিকভাবে কান্দি থানার পুলিশও তেমনটাই মনে করছে। তারা মৃণালের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর এবং সবদিক খতিয়ে দেখা হলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে, এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরই শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন মৃণালের স্কুলের শিক্ষকরা। মন ভালো নেই সহপাঠীদেরও।