শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। এমনকী পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছে যে শিক্ষক সমাজের একাংশের উপর আর ভরসা করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এমনকী শিক্ষকদের একাংশ সেই আগের মতো সমাজে সম্মান পান না বলেও মনে করা হয়। তবে এসবের মধ্যে একেবারে অন্য ছবি দেখা গেল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে।
কালিয়াগঞ্জের ধনকৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তড়িৎবিকাশ ভদ্র পেশায় ছিলেন গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্য়ালয়ের প্রধান শিক্ষক। গত ৩১ জানুয়ারি তিনি শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর নিয়েছেন। আদর্শ শিক্ষক বলতে যা বোঝায় তেমনটাই জীবন তাঁর। তাঁর হাত দিয়ে অনেকেই শিক্ষার আলো পেয়েছেন। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত। তাঁর নীতিশিক্ষা, আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার বিষয়টি প্রশংসার যোগ্য। সেই স্যার অবসর নিচ্ছেন। কার্যত স্কুলের সামনে ভেঙে পড়ল গোটা গ্রাম।
স্কুল থেকে শুরু হল বিরাট মিছিল। একেবারে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। সেই মিছিলে অভিভাবকরা যেমন রয়েছেন তেমনি পাড়ার যুবকরাও সামিল। রীতিমতো ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে মিছিল বের হয়। একঝলক দেখে মনে হতেই পারে কোনও রাজনৈতিক দলের মিছিল। কিন্তু নাহ এটা শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা।
স্কুল থেকে কয়েক কিলোমিটার মিছিল করে গ্রামের মানুষ স্যারকে তাঁর কালীবাড়ি সংলগ্ন এলাকার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এই মিছিল মন ছুঁয়ে গিয়েছে অনেকেরই। স্থানীয় বাসিন্দা ফালু দেবশর্মা বলেন, মাস্টারমশাই আমাদের ছেলেমেয়েদের খুব ভালোবাসেন। মাস্টারকেও আমরা খুব ভালোবাসতাম। তিনি সবসময় বিপদে আপদে পাশে থাকেন। যখনই বলতাম তিনি পাশে থাকতাম। সেই শিক্ষককে ফেয়ারওয়েল দিতে আমরা গ্রামের মানুষ সকলে সামিল হলাম। ছাত্রছাত্রীরাও এসেছিল ওই বিদায় সংবর্ধনায়। অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা না এলে ওই শিক্ষকই বাড়ি থেকে তাদের স্কুলে নিয়ে যেত। তার অবদান কোনওদিন ভোলার নয়।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, আমাকে ফেয়ারওয়েল দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। এতে আপ্লুত আমি। আমার ভাষা হারিয়ে গিয়েছে। আমি যেভাবে ভালোবাসি সেই ভালোবাসা আমায় ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। শিক্ষক হিসাবে এতটা সম্মান পাব আমি কোনওদিন ভাবিনি। আজীবন এই মানুষগুলোর পাশে আমি থাকব। এলাকায় শিক্ষার প্রসারে আমি কাজ করব।
তবে নিঃসন্দেহে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ঘিরে এই আবেগ কিছুটা হলেও অন্যরকম। চারদিকে যখন অবক্ষয় তখন একজন শিক্ষকের প্রতি এই সম্মান কার্যত নজিরবিহীন।