বধূর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার মামলায় স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির ৫ জন দোষী সাব্যস্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করল মালদহ জেলা আদালত। মঙ্গলবার ৫ অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। বৃহস্পতিবার দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন বিচারক। পাশাপাশি মোট চারটি ধারায় প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। এদিন এই সাজা ঘোষণা করেছেন মালদহ জেলা আদালতের অতিরিক্ত ফাস্ট কোর্টের বিচারক মৌ চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে চলা এই বিচার প্রক্রিয়ায় আদালতের শাস্তি ঘোষণায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন মৃতা গৃহবধূর পরিবার।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ৪ মার্চ অভিযোগ উঠেছিল কালিয়াচক থানার চোরিঅনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজিবুল শেখ ও তার পরিবার মিলে স্ত্রী ঝরনা বিবির গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। আরও অভিযোগ উঠেছিল, বধুর গায় কেরোসিন তেল ঢালতে সাহায্য করে রাজিবুলের বাবা ভোগ্গু শেখ, মা জোনাকি বিবি ছাড়াও দুই বোন আসমানি ও আসিয়া বিবি।
ঘটনার পরে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছটফট করতে থাকেন ঝরনা। তাঁর চিৎকার চেঁচামেচিতে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারাই ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রথমে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভরতি করেন। কিন্তু সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায়, ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে কলকাতায় রেফার করে দেন। এরপর কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে রাস্তার মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার পর মৃত ঝরনা বিবির বাবা মোতায়ের শেখ অভিযুক্ত জামাই ও তার পরিবারের ৫ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মৃতা বধুর পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে কালিয়াচক থানার পুলিশ। তারপর এই ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, পণের জন্য হত্যা ছাড়াও হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করে পুলিশ। এরপরই মালদহ জেলা আদালতে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই মামলা চলাকালীন মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার অভিযুক্ত শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দোষী সাব্যস্ত করে মালদা জেলা আদালত। তারপরেই এদিন দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করে আদালত।