সোনারপুরের ত্রাস জামালউদ্দিন সর্দার এখনও অধরা। তার বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসতেই তাকে গ্রেফতার করতে তৎপর হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পাশাপাশি তার প্রাসাদতম বাড়ির সুইমিংপুল থেকেও কচ্ছপ উদ্ধার করতে তৎপর হয়েছে বন দফতর। যদিও পরপর দুদিন কচ্ছপ উদ্ধার করতে গিয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে বন বিভাগকে। বুধবার বেশি রাতে জামালের বাড়িতে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ফের জামালের বাড়িতে যান বন কর্মীরা। তবে শেষমেষ কচ্ছপ উদ্ধার করতে ব্যর্থ বন বিভাগের কর্মীরা।
আরও পড়ুন: জামাল সর্দারের বাড়িতে হানা দিল বন দফতর, সোনারপুর থেকে কচ্ছপ মিলল কী?
বছরের পর বছর সোনারপুরে অসামাজিক কাজকর্মের পাশাপাশি খুনের অভিযোগ রয়েছে জামালের বিরুদ্ধে। তবে সম্প্রতি সালিশি সভায় গৃহবধূকে শিকলে বেঁধে মারধরের ঘটনার পরেই খবরের শিরোনামে উঠে আসে এই জামালের নাম। অভিযোগ ওঠে বাড়ির সুইমিংপুলেই তিনি কচ্ছপ পুষেছিলেন। আর এই কচ্ছপগুলি হল বিরল প্রজাতির, যার বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘ইন্ডিয়ান সফট শিল্ড টারটেল’। সেই খবর পাওয়ার পরে জামালের বাড়ি থেকে কচ্ছপ উদ্ধার করার জন্য তৎপর হয় বন দফতর। জেলার বন আধিকারিক মিলন মণ্ডলের নির্দেশে বারুইপুর রেঞ্জ অফিস থেকে ৬ সদস্যের দল বুধবার রাতে প্রথমে সোনারপুর থানায় যায়। এরপরে সেখান থেকে জামালের বাড়িতে যান বন কর্মীরা। তাদের সঙ্গে ছিল জাল এবং কচ্ছপ উদ্ধারের অন্যান্য সামগ্রী। রাত ১০টা নাগাদ বন কর্মীরা জামালের বাড়িতে পৌঁছন। কিন্তু, বাড়ির গেটের বাইরে প্রায় দেড় ঘণ্টা তারা অপেক্ষা করেন। কারণ গেটে তালা মারা ছিল। ফলে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারেননি বন কর্মীরা। সেদিন খালি হাতেই তাদের ফিরতে হয়।
বুধবারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের কচ্ছপ উদ্ধার যান বন কর্মীরা। তবে এদিনও সেখানে গিয়ে বাড়ির গেটের বাইরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। কারণে এদিনও গেটে তালা মারা ছিল। দরজা খোলা যায়নি। ফলে এদিনও খালি হাতেই ফিরতে হয় বন কর্মীদের। এই ধরনের বিরল প্রজাতির কচ্ছপগুলিকে বাড়িতে রাখা বা সুইমিং রাখা বেআইনি। ওয়ার্ল্ড লাইফ প্রটেকশন আইন অনুযায়ী, এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৭ বছরের জেল এবং ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, জামালের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, জোর করে জমি দখল, ভোটে রিগিং সহ খুন এবং নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০০৩ সালে নিজের ভাইকে প্রকাশ্যে রাস্তায় কুপিয়ে খুন করেছিল জামাল। এরপরেই তার অপরাধ বাড়তে থাকে। পরে রেশন কার্ড করিয়ে দেওয়ার নামে প্রচুর টাকা তোলে সে। পরে সরকারি জমি দখল করে। পুলিশ সুপার, ডিএম থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু, তারপরেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযোগ, জামালের তোলার কিছু অংশ তৃণমূল নেতারা ভোগ করেছেন। তাদের পরোক্ষ মদদ ছিল।এছাড়াও, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃত্যু হয়েছিল হারান অধিকারী নামে এক ব্যক্তির। তাঁকে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জামালউদ্দিন বলে পরিবারের অভিযোগ। যদিও সোনারপুরের তৃণমূল বিধায়ক লাভলী মৈত্র দাবি করেছেন তিনি জামালকে চেনেন না।