গা ছমছমে নিঝুম রাত। চারপাশে কেউ নেই। জঙ্গলে পাতা পড়ার আওয়াজও শোনা যাচ্ছে। এমন সময় বুঝতে পারলেন নীচে যেন কারা এসেছে। তবে ওদের দিকে আলো ফেলা বারণ। চাঁদনি রাতে দেখলেন গাছের নীচে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইসনের দল। ঘন জঙ্গল ঠেলে বেরিয়ে এল গজরাজ। এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন কখনও?
এবারই প্রথমবার বনদফতরের উদ্যোগে এই সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। নিঃসন্দেহে অভিনব। আর দেশের মধ্যে প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গের বনাঞ্চলে এই সুযোগ মিলবে। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের একাধিক বনাঞ্চলে এই সুযোগ মিলবে। গরুমারা অভয়ারণ্য, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সহ রাজ্যের বিভিন্ন অভয়ারণ্য়ে এই সুযোগ মিলবে। এমনকী সুন্দরবনের ওয়াচ টাওয়ারেও এই সাধ পূরণ হবে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে এই সুযোগ মিলতে পারে। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে একথা জানিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে পর্যটকদের জঙ্গলের বেশ কিছু বিধি মেনে চলতে হবে। কোনওভাবেই যাতে বন্য জীবনজন্তুদের বিরক্ত করা না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
সব ব্যবস্থা যথাযথ করার জন্য ওয়াচ টাওয়ারগুলিকে মজবুত করা হচ্ছে। কোনওভাবেই জঙ্গলের নিয়মকে লঙ্ঘন করতে পারবেন না পর্যটকরা। বাইরে থেকে কোনও খাবার নিয়ে যেতে পারবেন না পর্যটকরা। মূলত আরও বেশি করে পর্যটক টানার জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ওয়াচ টাওয়ারে রাত কাটানোর জন্য পর্যটকদের ঠিক কতটাকা গুনতে হবে সেটা এখনও জানা যায়নি।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, কোনওরকম বাইরের খাবার নেওয়া যাবে না ওয়াচ টাওয়ারে। কোনওভাবেই নজর মিনারে ওঠার পরে কোলাহল করা যাবে না। ক্যামেরার আলোয় যাতে বন্য প্রাণীদের সমস্যা না হয় সেটা মানতে হবে। কোনও নেশার জিনিস সঙ্গে নেওয়া যাবে না। পর্যটকরা যদি কোনও ক্ষেত্রে জঙ্গলের নিয়মকে লঙ্ঘন করেন তবে তাদের বড় জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে। বনদফতরের কর্মীরা সবসময় পর্যটকদের সঙ্গে থাকবেন।
কিন্তু এভাবে জঙ্গলের মধ্য়ে রাত কাটানোর জেরে বন্যপ্রাণীদের সমস্যা তৈরি হলে তার দায় কে নেবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। একাধিক ক্ষেত্রে জঙ্গল সাফারিতে গিয়েও বনের নিয়ম মানতে চান না পর্যটকদের একাংশ। সেক্ষেত্রে ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার পরে তাঁদের একাংশ যদি জঙ্গলের নিয়ম না মানতে চান, তবে তার দায় কে নেবে? ইতিমধ্যেই পরিবেশপ্রেমীদের অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।