ভরা তৃণমূল কংগ্রেসের বাজারে দলবদলের 'সুযোগ' ছিল। কিন্তু স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘মরে গেলেও তৃণমূল করব না।’ কিন্তু দলের প্রতি ‘ক্ষোভ’-এর কারণে সেই সিপিআইএম নেতা শ্যামল মাইতি এবার যোগ দিলেন বিজেপিতে। শ্যামলের হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে দেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিআইএমের অবস্থা একেবারে শোচনীয় হয়ে গিয়েছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালা পরিবর্তনের পর অবস্থা আরও খারাপ হয়। কোনওক্রমে টিমটিম করে জ্বলছিল সিপিআইএম। জেলায় তখন অধিকারীদের দাপট। সেই অবস্থায় কার্যত একাহাতে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারীদের ডেরা থেকে সিপিআইএমকে জিতিয়ে এনেছিলেন সিপিএমের তৎকালীন হলদিয়া শহর (দক্ষিণ) জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল। হলদিয়া আসনে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে জিতেছিলেন বাম প্রার্থী তাপসী মণ্ডল। ২০১১ সালে যে আসন গিয়েছিল তৃণমূলের ঝুলিতে।
তারইমধ্যে তমলুক লোকসভা আসনের উপ-নির্বাচনের আগে ধর্ষণের অভিযোগে শ্যামলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও সিপিআইএমের অভিযোগ ছিল, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের প্রত্যাবর্তনের কারণে আশঙ্কার দোলাচলে ভুগছিল তৃণমূল। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরিতার্থ করতেই শ্যামলকে ‘ভুয়ো’ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীরা।
পরে অবশ্য রাজনৈতিক পটভূমি পালটাতে থাকে। দলের ব্যবহারে ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে ওঠেন শ্যামল। মানভঞ্জনে শ্যামলের বাড়িতে গিয়েছিলেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রনর্তী। যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয়নি। বরং নিজের অবস্থানে অনড় থেকে শ্যামল বলেছিলেন, ‘দলের হয়ে এত কাজ করেছি। জেলও খেটেছি। সেই আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।’
সেই ‘ক্ষোভ’ আর প্রশমন করতে পারেনি বাম শিবির। ফলস্বরূপ আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরে বড়সড় ‘ছক্কা’ হাঁকাল বিজেপি। আর শুভেন্দুর সঙ্গে ‘মান-অভিমান’ পর্বের ফলে শ্যামলের মতো একজন নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলেরও চাপ বাড়ল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত।