ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলা প্রত্যাহার করতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিযোগকারীরা। অথচ সেই মামলাতেই গত তিন মাস ধরে জেলবন্দি ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের ভাইপো সঞ্জিত (পাপ্পু) সিং। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় দুটি প্রশ্ন উঠছে। এক, মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে কি অর্জন সিংয়ের চাপে? দুই, এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা কি সঠিক?
এই বিষয়ে রাজ্যপাল টুইটে লিখেছেন, ‘পুলিশের জারি করা এই নোটিস দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি।’ তিনটি নোটিসের ছবিও টুইটারে দেন তিনি। এদিকে অর্জুন সিংয়ের অভিযোগ, যাঁরা মামলা প্রত্যাহার করতে চাইছেন, ব্যারাকপুর গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ তাঁদের নোটিস পাঠিয়ে হাজিরা দিতে বলছে। পুলিশ বেআইনি কাজ করছে। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর অবশ্য জানান, পুলিশ আইন মেনেই কাজ করছে। আগামিদিনেও আইন মেনেই কাজ করবে। অভিযোগকারী মামলা প্রত্যাহার করলেও ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলা বন্ধ করা হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ভাটপাড়া–নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। তখন ওই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন ভাটপাড়ার তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অর্জুন সিং। তিনি তখন ভাটপাড়ার পুরপ্রধানও ছিলেন। ২০১৯ সালের গোড়ায় ভাটপাড়া থানায় ব্যাঙ্ক জালিয়াতি নিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তে জানা যায়, ব্যাঙ্কটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পুরসভা থেকে কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারদের তারা সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা ঋণ দেবে। কাজের বরাতের নথি দেখিয়ে ২৬ জন প্রায় ১৬ কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে তাঁরা আর ঋণ শোধ করেননি।
পুলিশ সূত্রে খবর, পুরসভা কোনও কাজের বরাতই দেয়নি! ঋণ পেতে ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করা হয়েছিল। সেই ঋণের টাকা কয়েকটি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল। আর সেই অ্যাকাউন্টগুলি পাপ্পুর সংস্থার। যা দিয়ে পাপ্পু ওই ব্যাঙ্কের পুরনো ঋণ শোধ করেছিলেন। ঘটনায় মোট ১৪ টি মামলা হয়েছিল। ব্যাঙ্কের তৎকালীন সিইও, পাপ্পু–সহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পাপ্পু এখনও জেলবন্দি।
সম্প্রতি ব্যারাকপুর আদালতে পাঁচ অভিযোগকারী হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁদের আর কোনও অভিযোগ নেই। তাঁরা মামলা প্রত্যাহার করতে চান। আর অভিযোগকারীদের ১৬০ ধারায় নোটিস পাঠিয়ে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ব্যারাকপুরে নিজের দফতরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ‘অভিযোগকারীরা জানান, অভিযোগের কপিতে কিছু ভুল রয়েছে। তাঁদের নামের ঋণের টাকা শোধ হয়ে গিয়েছে। তাই আর তাঁরা মামলাটি চালাতে চান না। কিন্তু অভিযোগে কী ভুল আছে, তা মামলাকারীর কাছ থেকে জেনে নেওয়াটা তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব। কারণ, তাঁকে বিষয়টি আদালতে জানাতে হবে। আর ঋণের টাকা শোধ হওয়াই তো মূল মামলা নয়, ভাটপাড়া পুরসভার অভিযোগ ছিল, ওয়ার্ক অর্ডার জালিয়াতি হয়েছে। ফলে সেই মামলা চলবে।’