সাগরের অতল গভীরে কি চলে যাবে কপিলমুনির আশ্রম? স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পুণ্যার্থীদের কাছে এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ ভাঙন যে হারে শুরু হয়েছে তাতে এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সাগরপাড় ভাঙনের ফলে তা এগিয়ে আসছে কপিলমুনির আশ্রমের দিকে। রোজই ভাঙছে সমুদ্র সৈকত। ২০২৫ সালের শুরুতেই গঙ্গাসাগর মেলা। দেশ–বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন পুণ্যস্নান করতে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সেটা ভয়াবহ আকার নেবে। তাই তড়িঘড়ি এবার বিশেষ নজর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ২০১৯ সালে কপিলমুনির মন্দির থেকে সমুদ্রসৈকতের প্রায় ৪৭০ মিটার দূরত্ব ছিল। ২০২৪ সালে সেই দূরত্ব কমে হয়েছে ২৭০ মিটার। এই তথ্য হাতে পেয়েই সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর। এই রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে সেচ দফতরের হাতে।
বর্ষা থেকে বানভাসী পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং তা থেকেই ভাঙনের সূত্রপাত। মাটি আলগা হয়ে যাওয়া এবং সমুদ্রে তলিয়ে যায় বাড়িঘর থেকে শুরু করে নানা কিছু। এবার রাজ্যের ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলির সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেচ দফতর। অগস্ট মাসে মানস ভুঁইয়া সেচ মন্ত্রী হওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর মনে করছে এবার কপিলমুনির আশ্রম রক্ষায় পদক্ষেপ হবে। এখান থেকে কিছুটা দূরে হাঁড়িভাঙা চরা ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা ভুটভুটিতে করে গিয়ে ওই চরায় মাছ ধরতেন। ওই চরার বিপরীতে ছিল জম্বুদ্বীপ। জম্বুদ্বীপ ভাঙনের কবলে পড়তেই হাঁড়িভাঙা চরেরও ভাঙন হয়। এখন হাঁড়িভাঙা চর আর নেই। তখন থেকেই সমুদ্রের ঢেউ একেবারে গঙ্গাসাগরের সমুদ্রসৈকতে আছড়ে পড়ছে। যার জেরে ভাঙন আরও বাড়তে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি শনাক্তকরণে কাজ করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, নয়া ঘোষণা মেয়র ফিরহাদের
এই পরিস্থিতি যে বিপদের সংকেত বহন করছে তা এখন সবাই বুঝতে পারছেন। তাই সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, সাগরের অতল গভীরে চলে যাবে না তো কপিলমুনির আশ্রম বা মন্দির? গত পূর্ণিমার যে কটাল হয়েছিল তাতে এক থেকে পাঁচ নম্বর সমুদ্র সৈকতের যোগাযোগকারী রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। গঙ্গাসাগরে সমুদ্রের ভাঙন এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তা ঠেকাতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই দুই নদী এবং সমুদ্র বিশেষজ্ঞকে নিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। তখন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সাগরের বিডিও কানহাইয়া কুমার ও সেচ দফতরের অফিসাররা।
প্রত্যেকটি বিষয় তখন খতিয়ে দেখা হয়। এই ভাঙন ঠেকাতে আশু করণীয় কাজ কী তা নিয়ে আলোচনা হয়। এবার সেচ দফতর সমীক্ষা করলেই বাকিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই বিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, ‘নদী ও সমুদ্র বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর রায়চৌধুরী এবং বিভাস বর্মণ ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জোয়ার–ভাটার সময় তাঁরা পর্যবেক্ষণ করবেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় মাটির কী পরিস্থিতি হচ্ছে। তারপর একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন। সেই রিপোর্ট সেচ দফতরে জমা পড়বে। তারপর পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।’