রুক্ষ–শুষ্ক অবস্থায় এক ব্যক্তি থানায় এসে হাজির। সাদা চুল–দাড়ি নিয়ে রোদ মাথায় করে এসেছেন তিনি। কিন্তু কি দাবি তাঁর? কেন থানায় এসেছেন? জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেললেন তিনি। ডিউটি অফিসার জিজ্ঞাসা করলেন কাঁদছেন কেন? কেউ আপনাকে হুমকি দিয়েছে? মারধর করেছে? কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ছেলে আমায় দেখে না। ৬ বছর ধরে একবেলা খাওয়ার মতো টাকা দেয়। পাড়ার সবাই বলল, পুলিশে যেতে। তাই অভিযোগ জানাতে এসেছি। ছেলে স্কুলে পড়ায়’।
এই অভিযোগ শোনার পর মুহূর্তে থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল। কি করবেন যেন বুঝতে পারছেন না ডিউটি অফিসার। বৃদ্ধের চোখে জল দেখে তখন কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না পুলিশ অফিসার। তবে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি করতেন? জানা গেল, গত ৪৫ বছর বাসের কন্ডাকটার ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বাড়ি তারকেশ্বর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। ছেলে চাকরিও পেয়েছেন। স্ত্রীকে হারিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। ৭৪ বছর বয়সে শরীর এখন অশক্ত। কাজও করতে পারেন না। সেই বাবাকে দেখে না শিক্ষক ছেলেও। মাসে দেড় হাজার টাকা দেয়। সুগার, প্রেশারের ওষুধ কিনতেই খরচ হয়ে যায় বেশিরভাগ টাকা। আর সামান্য যা থাকে তাতে একবেলা জোটে খাবার।
এখানেই শেষ নয়। গুণধর ছেলে সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ থানায় বলেন, ‘ছেলে ছলচাতুরি করেছে। কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর ভেবেছিলাম বাড়ি বিক্রি করার অর্থে অবসর জীবন কাটাব। কিন্তু সেখানেও বাধা দেয় ছেলে মানিক ঘোষ। ৩০ লক্ষের সম্পত্তি ১০ লক্ষে কিনতে চায় সে। আর বলে নগদ টাকা দেবে না। বাবার নামে স্থায়ী আমানত করে দেবে। আর সেখানে ও ‘নমিনি’ থাকবে। এই প্রস্তাবে রাজি হইনি। আর এখন আধপেটা খেয়ে থাকতে হচ্ছে।’
তবে স্কুল শিক্ষক ছেলে মানিক ঘোষ অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাবা বাসের কন্ডাক্টারি করেই আমাকে পড়িয়েছেন। কষ্টে কেটেছে শৈশব। আমার ক্ষমতায় যা কুলিয়েছে তাই দিয়েছি। দু’হাজারের বেশি দিতে পারি না। উনি পুলিশে গিয়েছেন, যেতেই পারেন, আমার কিছু করার নেই। ছ’জনের সংসার চালাতে হয়, কোথায় পাব?’