আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। সকাল থেকেই ঘাটে ঘাটে তর্পণ চলছে। হাতে আর বেশি সময় নেই। আর একসপ্তাহ পর গোটা রাজ্য মেতে উঠবে শারদ উৎসবে। এই আবহে রাজ্যে অনাহার এবং পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আজ গান্ধী জয়ন্তীতে এভাবেই রাজ্যকে দুষলেন বোস। যদিও পাল্টা দিতে দেরি করেননি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাও। সুতরাং মহালয়া এবং গান্ধী জয়ন্তীর দিনে সরগরম হয়ে উঠল রাজ্য–রাজনীতি।
এদিকে রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপালের সংঘাত নতুন নয়। বরং সেটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শিক্ষা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাত লেগেই আছে। এমনকী মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেখানে অবশ্য রাজপালকে ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। বিধানসভার বিল সই করা নিয়েও জটিলতা অব্যাহত রয়েছে। এই আবহে আজ, বুধবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, ‘এমন এক পবিত্র দিনে গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এই দিনে আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। আমরা খবর পাই মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। কর্মসংস্থান কমছে। এরকম জিনিস সভ্য সমাজে ঘটা উচিত নয়। এমনটা গান্ধীজি চাননি। রাজ্য সরকারের উচিত দেখা যেন রাজ্য থেকে কেউ না যান। না খেয়ে মারা না যায়। এটাই আজ শপথ নেওয়া।’
আরও পড়ুন: ফুলের খেত জলের তলায়, দামের জেরে নাভিশ্বাস দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদের, কমছে বিক্রি
অন্যদিকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আবার মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আর তাতেই জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ রাজ্য সরকারের একের পর এক কাজ স্বীকৃতি পাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। সেখানে রাজ্যকেই দুষলেন রাজ্যপাল। বুধবার গান্ধী জয়ন্তীতে ব্যারাকপুর গান্ধীঘাটে আসেন সিভি আনন্দ বোস। সেখানেই রাজ্যের কর্মসংস্থান–সহ নানা ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেন রাজ্যপাল। কাজ নেই, খাবার নেই বাংলায় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজ্যপালের কথায়, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলার মাটিতে অনাহার এবং পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা সামনে আসছে। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, কোন সভ্য সমাজে এই অনাহারের ঘটনা থাকতে পারে না। রাজ্য সরকারের দেখা উচিত।’
রাজ্যপাল এইসব কথা বলার পর সঙ্গে সঙ্গে মেলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া। পাল্টা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করা হয়। রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অরূপ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘মহাত্মা গান্ধী যদি আজ থাকতেন তাহলে তিনি কি এটা চাইতেন যে মনরেগা প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে দেবে? আড়াই বছর কাজ করার পরও শ্রমিকরা টাকা পাচ্ছেন না। এই দালাল রাজ্যপালকে প্রশ্ন করুন, গান্ধী মূর্তিতে মালা দিয়েছেন ভাল কথা। কিন্তু গডসের জন্মদিনেও কি তিনি তাঁর গলায় মালা দেবেন? গান্ধীজি যদি থাকতেন তাহলে কি তিনি চাইতেন যে রাজ্যপাল তাঁর এক কন্যাসম মহিলাকে যৌন নির্যাতন করবেন?’