এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নেমে সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন। আর আজ নতুন বিতর্ক অনীত থাপাকে নিয়ে। কারণ তাঁর নাকি দু’দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে! এই অনীত থাপা গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) চেয়ারম্যান রয়েছেন। কাঠমান্ডুর একটি নিউজ পোর্টাল দাবি করেছে, অনীত থাপা নেপালেরও নাগরিক। এক ব্যক্তি দুই দেশের নাগরিক থাকেন কি করে? উঠছে প্রশ্ন।
এই অনীত থাপা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদকও। তবে বিনয় তামাং গোষ্ঠীর। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।’ অথচ এই নেপালের নিউজ পোর্টাল খবর করেছে, ভারতীয় নেতার নেপালের নাগরিকত্ব। এমনকী অনীত থাপার ছবি লাগানো নেপালের নাগরিকত্বের নথি সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। যা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। এই নিউজ পোর্টালটির খবর অনুযায়ী, অনীত থাপা ১৯৯৫ সালে দুবাই গিয়েছিলেন। আর ১৯৯৪ সালে তিনি নেপালের নাগরিকত্ব পান। সেই নথি থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি নেপালের ঝাপা জেলার বাসিন্দা। সেখানে উল্লেখ রয়েছে তিনি বিনোদ থাপার সন্তান। যদিও সেই ঠিকানায় বিনোদ থাপা বলে কেউ থাকেন না। অনীত থাপা দু’বছর দুবাইতে থাকার পর নেপালে ফিরেছিলেন বলে খবর।
এই বিতর্কে যখন কাঞ্চনজঙ্ঘা গলতে শুরু করেছে তখন একটি বিবৃতি প্রকাশ করে অনীত থাপা বলেছেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কেউ যদি এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করুক। যখনই গোর্খাদের দাবি নিয়ে পাহাড় সরব হয়েছে তখনই এই ধরনের ষড়যন্ত্র রচনা করে সেই আওয়াজ দমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ দুবাই যাওয়ার কথাও অস্বীকার করে তিনি জানান, আমি সুইডেন ও ইউরোপ গিয়েছিলাম। আর আমি ভারতীয়। তাই ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়েই গিয়েছিলাম। অনীত থাপা এই দাবি করলেও পাহাড় এখন চঞ্চল হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, এক বছর আগে অনীত থাপার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল ভারত ও নেপাল দু’দেশের নাগরিকত্ব তাঁর আছে বলে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াংয়ের মহকুমাশাসক নোটিস জারি করেছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যাঁদের দু’দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে তাঁরা যোগাযোগ করুন। সেই নোটিস নাকি অনীত থাপার কাছেও পৌঁছেছিল। এমনকী ২০১৯ সালের ১২ আগস্ট এই নোটিসের সঙ্গে চিঠি লিখে জমা দেওয়া হযেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। সেখানে অনীত থাপার কথা উল্লেখ করা হয়।
এই বিষয়ে যখন চরম শোরগোল পড়েছে তখন মহকুমাশাসক অভিষেক চৌরাসিয়া বলেন, ‘এটা নিয়ে অনুসন্ধান করে সেই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ এই কবর প্রকাশ্যে আসতেই পাহাড়ের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সোচ্চার হয়ে উঠেছে। জিএনএলএফের মুখপাত্র মহেন্দ্র ছেত্রী বলেন, ‘আমরা এই অভিযোগের উপর কড়া ব্যবস্থার দাবি করছি। দু’দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে চলা অপরাধ।’ দার্জিলিং জেলা কমিটির বিজেপি সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। অনীত থাপার উচিত সত্যকে সামনে আনা।’ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তা ছেত্রী বলেন, ‘এটা সরকারের দায়িত্ব তদন্ত করা।’